ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রংপুরে বাড়ছে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক, শনাক্ত বেড়ে ১১

আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৪ পিএম
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় আরও ২ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১১ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো।
 
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে ২ জন মারা গেছেন। একই সময়ে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির মধ্যে এ রোগের উপসর্গ দেখা যায়। পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করা হয়।
 
ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। 

এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে কৃষক ইব্রাহিম মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেটি জবাই করা হলে আশপাশের লোকজন মাংস কাটেন। ঘটনার ২ দিন পর স্থানীয় ৪ জন- সোহরাব হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মনির হোসেন ও মজিবর রহমানসহ কয়েকজন চর্মরোগে আক্রান্ত হন। তাদের শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। এছাড়া এক নারীও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক।

ইমাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রতিনিধি রয়েছে। গরু জবাই করার পূর্বে যাচাই-বাছাই করবেন গরুটি সুস্থ রয়েছে কিনা, এবং দিনের বেলা জনসাধারণের সামনে সুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করছেন গঠিত কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও মাত্র ৮০ পয়সায় গবাদিপশুকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
 

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. এম এ হালিম লাবলু জানান, মিঠাপুকুরে এ পর্যন্ত ৭ জনের অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১ জন পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া গেছে। এছাড়াও এক গৃহিণীর শরীরেও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ রয়েছে। আমরা আপাতত ২ জনকে অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, ভালোভাবে সিদ্ধ করে মাংস খেতে হবে। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। এ জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

এদিকে কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আক্রান্ত গরুর মাংস কাটা, নাড়াচাড়া ও খাওয়ার কারণে ঠাকুরদাস গ্রামের সোহেল (৩৫), এরশাদুল ইসলাম (৪০), জাহিদ হোসেন (২৮) এবং শান্তা বেগম (২৫) অসুস্থ হয়েছেন।
 
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা চলছে এবং তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।
 

কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে এলাকাজুড়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৫ হাজার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরও ৩০ হাজার ভ্যাকসিন আনা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে টিম গঠন করে টিকাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দুই-একদিনের মধ্যে ৩৫ হাজার ভ্যাকসিন প্রদান সম্পূর্ণ হবে।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন হাটবাজারে লিফলেট বিতরণ এবং পথসভা আয়োজন করা হচ্ছে। মাঠকর্মীদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে, যারা হাটবাজারে উপস্থিত থেকে কসাইদের গরু জবাই করার সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। প্রতিটি কসাইকে বিষয়টি বোঝাতে চিঠি ও লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজয় সাহ জানান, ৪ জন অসুস্থ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা চলমান রয়েছে। তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।
NJ
আরও পড়ুন