গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। রোগাক্রান্ত ও অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর এই সংক্রামক ব্যাধিতে একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। মাঠ পর্যায়ে প্রাণি সম্পদ বিভাগের উদাসীনতা, স্বাস্থ্য বিভাগের নীরবতা এবং সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা মিলিয়ে পরিস্থিতি হয়ে উঠছে জটিল।
জেলা জুড়ে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বিক চেষ্টা চলছে বলে দাবি প্রাণি সম্পদ বিভাগের।
জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরের কিসামত সদর গ্রামে মুজিবুর রহমান মন্টু মেম্বারের বাড়িতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর অসুস্থ একটি গরু জবাই করা হয়। সেই গরুর মাংস কাটার একদিন পরে ১১ জনের হাতে, পায়ে ও মুখে দেখা দেয় ফোসকা, কালো দাগ ও ক্ষত। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ।

স্থানীয় হাসপাতালে গেলে তাদের চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বিদায় করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়ি ফিরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আক্রান্তরা। অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় সংক্রমনের ভয়ে তাদের সাথে কেউ মিশছে না এখন। ফলে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে হচ্ছে আক্রান্তদের।
শুধু যে ওই এলাকাতেই রোগটি ছড়িয়েছে তা নয়, বরং সংক্রমিত এলাকার সংখ্যা বাড়ছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা, আলুরটারি, বামন ডাঙ্গা ও সর্বানন্দ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগ। ১১ জন থেকে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে।
আক্রান্তরা হলেন- বেলকা গ্রামের সামিউল ইসলাম, সাহাদৎ হোসেন, সবুজ মিয়া, বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আজিজল হক, পশ্চিম বেলকা গ্রামের ভূট্ট মিয়া, আতিকুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, বেলকা গ্রামের মোজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, খতিব মিয়া, ফরিদুল হক, রুজিনা বেগম, কিসামত সদর গ্রামের মোজা মিয়া, মাহবুর রহমান, শাফিকুল ইসলাম, স্বাধীন মিয়া, সকিনা বেগম, তাইজল মিয়া, শিশু ছায়ফান, আফরিন বেগম, ছালদিয়া ইসলাম, ও রইসুল মিয়া।
সংক্রমিত গ্রামগুলোতে প্রায়দিনই হঠাৎ গরু ও ছাগল অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। এর ফলে গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
স্থানীয়দের অভিযোগ- বেশ কিছুদিন ধরে পশু মারা গেলেও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা তেমন মাঠে আসছেন না, নেই কোন পরামর্শ বা চিকিৎসা সহায়তাসহ তৎপরতা। রোগ প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ বিভাগ কিছু সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে দায় সাড়ছে। দুর্যোগ কাটাতে ফ্রি ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে সরকারি ভাবে ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ১শ টাকা পর্যন্ত। স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, টাকা না দিলে ভ্যাকসিন দিচ্ছেন না।
গাইবান্ধা আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান ও গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত ৭ অক্টোবর ওই এলাকার মৃত পশুর নমুনা সংগ্রহ করে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে।

আক্রান্ত কিসামত সদর গ্রামের মোজা মিয়া জানান, এ পর্যন্ত সরকারি ভাবে স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা প্রাণী সম্পদ বিভাগ কেউ খোঁজ নিতে যাননি।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রদানসহ সার্বিক চেষ্টা করা হচ্ছে। গরু প্রতি ৮০ পয়সার বেশি যাতে ভ্যাকসিন প্রদানে না নেয়া হয় সে জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুজ্জামান জানান, অ্যানথ্রাক্স রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না এবং মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই কম। আতঙ্ককিত না হয়ে অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্যমতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৫শ ৮০টি গরু ও প্রায় ৫০ হাজার ছাগল রয়েছে। যার মধ্যে গত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার গরু ও ছাগলকে।
