গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় স্বামী কারাগারে থাকলেও অন্য আসামিরা জামিনে এসে বাদী ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ মোছা. রুমি আক্তার ইয়াসমিন (২১) ও তার পরিবার এ অভিযোগ করেন। রুমি আক্তার উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের পূর্ব বেলকা গ্রামের রেজাউল আলমের মেয়ে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মুসলিম শরীয়ত মোতাবেক রেজিস্ট্রি কাবিননামার মাধ্যমে রুমি আক্তার ইয়াসমিনের সঙ্গে লাজু মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে রুমিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লাজু মিয়া একতরফাভাবে স্ত্রীকে তালাক দেন।
পরে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একই বছরের ১৩ মার্চ ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে তাদের পুনরায় রেজিস্ট্রি বিবাহ সম্পন্ন হয়। তবে পুনর্বিবাহের পরও নির্যাতনের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়নি। এ সময় রুমি আক্তার ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হন।
গর্ভাবস্থায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে একবস্ত্রে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল পূর্ব বেলকা বাজারে রুমিকে মারধর ও টানাহেঁচড়া করা হয় এবং মা-ছেলেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের প্রাণে রক্ষা করেন।
এ ঘটনায় গত ১৪ মে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলা দায়ের করেন রুমি আক্তার ইয়াসমিন। এতে তার স্বামী লাজু মিয়াসহ (২৪) ৪ জনকে আসামি করা হয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ২৯ সেপ্টেম্বর লাজু মিয়া ছাড়া বাকি ৩ আসামিকে জামিন দেওয়া হয়।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- লাজু মিয়ার বাবা আলেপ উদ্দিন (৫০), মা সাজেদা বেগম (৪৮) ও বড় ভাই নুর ইসলাম মিয়া (২৮)।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, জামিনে থাকা ৩ আসামি ও তাদের স্বজনরা মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি রুমির গর্ভে থাকা সন্তানকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন তারা। এতে পরিবারটি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
রুমি আক্তার ইয়াসমিন বলেন, আমার জীবন তো শেষ! কিন্তু আমি আমার পেটের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই। আমার স্বামী জেল থেকে ছাড়া পেলে পেটের বাচ্চাসহ আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ৪ বছরের ছেলেকে নিয়েও খুব টেনশন হচ্ছে। আমি এখন খুব ভয় পাচ্ছি।
রুমির বাবা মো. রেজাউল আলম বলেন, বিয়ের পর জামাতা লাজু মিয়াকে স্থানীয় বেলকা মনিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির চাকরি জোগাড় করে দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর থেকেই সে আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন শুরু করে। পারিবারিক বিষয়ে সামান্য অজুহাতেও তাকে মারধর করত। জামাই এখনো জেলে আছে। বের হলে আমাদের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিচ্ছে তার পরিবার। মেয়েকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাসীর মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ
ছাত্রদলের নেত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার হুমকি