ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ঘোড়াঘাটে খাস জমি যেন মগের মুল্লুক!

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে চলছে সরকারি খাস জমি দখলের মহোৎসব। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি প্রশাসনের নিরব সমর্থন এবং নামমাত্র “ম্যানেজমেন্ট”-এর আশীর্বাদে খাস জমি দখল করে নির্মাণ করছে বিভিন্ন স্থাপনা। সবকিছু হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের চোখের সামনেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খোদ উপজেলা ভূমি অফিস ও টিএন্ডটি অফিসের সামনে সরকারি খাস জমি দখলের মহোৎসব চলছে। যেটুকু বাকি আছে সেটাও দখল হয়ে যাবে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে জনবসতি সংলগ্ন খাস জমিগুলোতে এখন একের পর এক দখল অভিযান চালানো হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বেনামে বা রেজিস্ট্রেশনবিহীন সংগঠনের নামে খাস জমি দখল করে স্থায়ী ঘর তুলছে। এসব সংগঠন মূলত নামধারী কোনো সরকারি স্বীকৃতি বা নিবন্ধন নেই। কিন্তু তাদের ব্যানারেই চলছে জমি দখল ও স্থাপনা নির্মাণ।

আরও জানা গেছে, কিছু কিছু দখলকারী উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে ওই সুযোগেই নির্বিঘ্নে দখল কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ইউএনও অবগত থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

দখলকারীরাও প্রকাশ্যেই বলে বেড়ায়- ‘সব ম্যানেজ করা আছে।’

সরকারি খাস জমি ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের হলেও বছরের পর বছর ধরে এসব জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে- আর এসব বিষয়ে প্রশাসনের নীরব সমর্থন রয়েছে বলে খবর নিয়ে জানা গেছে। খাস জমি দখল ঠেকাতে সরকারের কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও ঘোড়াঘাটে যেন তার কোনো প্রয়োগ নেই। দিন দিন বাড়ছে দখলের পরিধি, আর কমছে সরকারি সম্পত্তি।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এভাবে যদি প্রশাসন নিরব থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে সরকারি খাস জমি নামমাত্র কাগজে থাকলেও বাস্তবে পুরোপুরি দখল হয়ে যাবে কিছু প্রভাবশালীর হাতে।

অপরদিকে এমনও অনেক ভিপি সম্পত্তি লিজ দেওয়া আছে, যেগুলোর প্রকৃত লিজাররা জমি বুঝে পায়নি। কিন্তু প্রতি বছর খাজনা পরিষদ করেন, অথচ সেই জায়গা দখল করে বাড়িঘর করে আছে অন্য কেউ, সেদিকেও নজর নেই প্রশাসনের।

প্রকৃত লিজাররা ইউএনও এসিল্যান্ডের কাছে বহুবার অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাননি। বরং তারা অন্য আইনের গল্প শুনিয়ে ছেড়ে দেয়। দেখলে মনে হয় এখন সব মগের মুল্লুক।

ভূমি অফিস ও সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ঘোড়াঘাটে মোট খাস জমির পরিমাণ ৮৮২.৬৪ একর, যার মধ্যে ৭৬১.৭৫ একর কৃষি জমি এবং অকৃষি জমি রয়েছে ১২০.৮৯ একর। বন্দোবস্ত যোগ্য কৃষি জমি রয়েছে ২৫৮.৩২ একর।

জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল আল মামুন কাওসার শেখ জানান, আসলে অর্পিত বা ভিপি সম্পত্তি বাদে অন্যান্য খাস জায়গাগুলো তেমনভাবে তদারকি করা হয় না। যখন যেটা প্রয়োজন হয়, তখন সে জায়গা আমরা নিয়ে নেই। প্রয়োজন হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিগত সময়ে অনেক জায়গা উদ্ধার করে সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন যারা খাস জায়গা দখল করে আছে, তাদের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তারপরও এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব।

এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায় তিনি কয়েকদিনের জন্য সরকারি কোনো ট্রেনিংয়ের জন্য বগুড়া অবস্থান করছেন।

ঘোড়াঘাটের সাধারণ মানুষের দাবি, খাস জমি দখল বন্ধে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি যারা ইতোমধ্যেই সরকারি খাসজমি দখল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

NJ
আরও পড়ুন