ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

দখল ও ভরাটে মৃতপ্রায় সুনামগঞ্জের খালগুলো

আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৪, ১১:০১ এএম

এই বছরে বর্ষা মৌসুমে তিনবার বন্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সুনামগঞ্জবাসীকে। এতে মানুষের ঘরবাড়িসহ অনেক গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমি ও মাছের ঘের ভেসে গেছে।

স্থানীয়দের দাবি, নদী থেকে হাওরে পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দখলের কারণে বছর বছর ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এবার বর্ষা মৌসুমের পানি হাওরে বিলম্বে প্রবেশ করেছে। অনেক গ্রামীণ সড়ক ভেঙে পানি প্রবেশ করতে দেখা গেছে। গেল দেড় মাসের মধ্যে তিন দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে দ্রুত সুরমা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। আবার সুরমা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ঝাওয়ার হাওর ও দেখার হাওরের তীরবর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতা শিকার হয়েছেন বাসিন্দারা। 

নদী থেকে হাওরে পানি নিষ্কাশনের খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। খালের অংশ অনেকের দখলে নিয়েছে। কয়েক বছর আগেও নদীতে পানি এলে যে খালগুলো দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে, সেগুলো দখল হয়ে ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও সংকুচিত হয়েছে। একারণে এ বছর বর্ষার শুরুতে নদীতে পানি বিপৎসীমার উপরে বইলেও হাওরে পরিপূর্ণ পানি দেখা যায়নি। এতে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো প্রথম প্লাবিত হয়েছে। পরে অনেক গ্রামীণ সড়কপথ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করতে দেখা গেছে।  

গোদারগাও গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। মৃত খালের উপর অনেক ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এই খাল দিয়ে পানি ঢুকতে পারে না হাওড়ে। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি খাল দিয়ে পানি হাওরে ঢুকতো, হাওরের পানি নদীতে চলাচল করে ভারসাম্য বজায় থাকতো। এখন এগুলো বন্ধ থাকায় নদীর পানি চলাচল সড়কের উপর দিয়ে যায়। অনেক সড়ক ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে করে আমাদের চলাচলে খুবই অসুবিধা হয়। খালগুলো চিহ্নিত করে উদ্ধার ও দ্রুত খনন করা দরকার। 

একই গ্রামের বাসিন্দা মোসাদ্দর আলী বলেন, সব খাল ভরাট হয়ে গেছে। খালের উপর বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য বর্ষাকালে মেঘ-বৃষ্টি হলে নদীর পানি বেড়ে এই পানি আশপাশের সড়ক ভাঙে। বাড়ি-ঘর ভেঙে হাওরে পানি যায়। এতে প্রতি বছরেই আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, গ্রামীণ সড়কের ৫৯৪ কিলোমিটার তিন দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সড়কগুলোর কোথাও ওয়াশআউট হয়েছে। এছাড়াও ৮৮৬ মিটার ব্রিজের ক্ষতি হয়েছে। যা টাকার অংকে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির তালিকা মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন।

ভরাট হয়ে যাওয়া খালগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জুগিরগাঁও খাল, ধনপুর খাল, হাজারিগাঁও খাল, গড়ারগাঁও খাল, নোয়াগাঁও খাল, আমবাড়ী এলাকায় আমআমি খাল, ব্রাহ্মণগাঁও বড়খাল, ছারাখালি খাল, গোদারগাঁও খাল, খাইমতর খাল। খালের কোনো কোনো অংশ একেবারেই সরু হয়ে গেছে।

ঝাওয়ার হাওরপাড়ের মোল্লাপাড়া ও কুরবাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুল হক এবং বরকত আলী জানিয়েছেন, খালগুলো ভরাট হয়ে ঘরবাড়ি হয়েছে। অনেক জায়গায় খালের অস্তিত্বই নেই। যে কারণে সুরমা নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করতে পারে না, আবার হাওরের পানি সময়মতো নদীতে প্রবেশ করতে পারে না। এতে সড়ক ও মানুষের ঘরবাড়ি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে কুরবাননগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের বড়খাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালের সুরমা নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে আরসিসি ঢালাই সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। উৎসমুখ বন্ধ হওয়ায় পানি প্রবাহ একদম বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও পুরো খালের মধ্যে কোথাও বাঁধ, কোথাও দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বললেন, খাল ও জলাশয় প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে খাল খনন করা হয়েছে। সামনে প্রতিটি উপজেলায় ৫টি করে খাল খনন করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের নিকট তালিকা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে পর্যায়ক্রমে খালগুলো খনন করার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

AHA/FI
আরও পড়ুন