সুনামগঞ্জের একটি বাসায় এক মাসের বাসা ভাড়া দিতে তিনদিন বেশি হওয়ায় বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী ভাড়াটিয়াকে বাসার ভেতরে রেখেই দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে জেলা শহরের রায়পাড়া এলাকায় নেক্কারজনক এই ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তালা খুলে তাদের উদ্ধার করেছে। এমন অমানবিক ঘটনায় এলাকা জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ আবুল কালাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসা ভাড়ার টাকা দিতে দেরি হওয়াতে বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী তিনদিন আগে বাসার গ্যাস বন্ধ করে রেখেছেন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই ) সকালে এসে ভাড়াটিয়াদের ভেতরে রেখে ঘরে তালা লাগিয়ে চলে যান ইউসুফ চৌধুরী। এসময় বাসার ভেতরে আটকা পড়ে ভাড়াটিয়া ইমন বর্মন ও তার মা, স্ত্রীসহ পাশের বাসার দুজন শিক্ষার্থী। বাসার ভেতরে আটকা পড়া দুই শিক্ষার্থীকে তালা খুলে বের করে দিয়ে আবার বাসায় তালা দিয়ে চলে যান তিনি। এসময় অন্য ভাড়াটিয়াদের সাবধান করে দিয়ে যান তাদের যেনো সাহায্য না করা হয়।পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে ভাড়াটিয়াকে ফোন করে বাসার চাবি এনে তালা খুলে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এবিষয়ে শিক্ষার্থী ইমন বর্মন জানান, বাসা ভাড়া দিতে দেরি হওয়াতে তিন দিন আগে গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দিয়েছে বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী। না খেয়ে থাকতে হয়েছে ৩ দিন ধরে। আমার মা ২ দিন সময় চাওয়াতে খারাপ আচরণ করেছে মায়ের সাথে। আজ (মঙ্গলবার) সকালে এসে আমাদের বাসার ভেতরে রেখে দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
মাস পেরিয়ে তিন দিন অতিক্রম হলে বাসার মালিক পরিবারের সবাইকে ঘরের ভিতরে রেখেই তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে আশপাশের মানুষদের আমি জানালা দিয়ে ডাকতে শুরু করি। পরে তারা এসে আমাদের এই অবস্থা দেখে স্থানীয় থানায় পুলিশকে খবর দেয় এবং কয়েক ঘণ্টা তালাবদ্ধ ঘরে থাকার পর পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন নেককারজনক ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি, আমরা তার ধিক্কার জানাই। সামান্য টাকার জন্য মানুষ এতোটা নিচে নামতে পারে কিভাবে। ঘরে আটকে থাকা তাদের যদি কোন ধরনের অঘটন ঘটে যেত তাহলে এর দায়বার কে নিতো।
পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া স্বপন চন্দ্র বলেন, ঘরে আটকে থাকা তাদের চেচামেচি শুনে আমরা এসে দেখি বাহিরে তালা লাগানো। মানুষের সমস্যা হতেই পারে মাত্র তিন দিন হয়েছে মাস পেরিয়ে এরজন্য এইরকম আচরণ আমরা মেনে নিতে পারছি না, আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ব্যাপারে বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী বলেন, সময় মত কারেন্ট বিল গ্যাস বিলের টাকা পরিশোধ করতে হয়। এছাড়াও তাদেরকে আমি এক বছর আগে নোটিশ দিয়েছি এখন আমার বাসা ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই তালা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ আবুল কালাম বলেন, রায়পাড়ায় এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয়দেরকে সাথে নিয়ে বাসার মালিকে কল করে চাবি নিয়ে এনে তালা খুলে তাদেরকে উদ্ধার করে পুলিশ। তারা এখন ওই বাসায় রয়েছে।
