সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞার পরিণতি কী হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সম্ভাব্যতা এবং এর আইনগত ফলাফল নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
রোববার (১১ মে) গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮(১)-এর ক্ষমতা প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। অতীতে একই আইন প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ওই সংগঠনগুলোকে তফসিল-২ এ ‘নিষিদ্ধ সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ধারা ১৮ অনুযায়ী কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হলে প্রথমে তাকে সন্ত্রাসী সংগঠন এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর চতুর্থ অধ্যায় ও ধারা ১৭ অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হয়। আওয়ামী লীগকে যদি এভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, তবে এর সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সদস্যদের ওপর আইনত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপিত হবে।
আইনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যারিস্টার কাজল ব্যাখ্যা করেন, এই আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হন বা সংগঠনটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন জানান, তা হলে সেটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ৬ মাস থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী, একটি সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে— তার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। এতে সদস্যপদ, মিটিং আয়োজন, অর্থ সংগ্রহ, প্রচার কার্যক্রমসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড আইনত বন্ধ হয়ে যাবে।
ব্যারিস্টার কাজলের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের পক্ষে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার চালানোও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তিনি বলেন, ধারা ৯(২) অনুসারে, যদি কেউ কোনো নিষিদ্ধ সত্তার উদ্দেশ্যে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তথ্য প্রচার করে, তাহলে সেটিও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর জন্য ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হতে পারে।
তিনি জানান, ফেসবুকে ছবি, লেখা প্রকাশ বা শেয়ার করাকেও পূর্বে এই ধারার আওতায় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বিগত সরকারের সময় এ ধরনের বহু মামলায় আমি আইনজীবী হিসেবে যুক্ত থেকেছি।
ব্যারিস্টার কাজল সতর্ক করে বলেন, যদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তবে উপর্যুক্ত সব আইন ও শাস্তির বিধান তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এটি হবে একটি নজিরবিহীন ঘটনা, যা দেশের রাজনীতি ও আইনি বাস্তবতায় গভীর প্রভাব ফেলবে।
দলকে নিষিদ্ধ করার রায় দেওয়ার মালিক জনগণ: কাদের সিদ্দিকী