ভুয়া এজেন্সির আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যুবকদের আকৃষ্ট করে রাশিয়াতে কাজের কথা বলে মানব পাচারের অভিযোগে চক্রের মূলহোতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় র্যাব-৪ এর সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবীর এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) র্যাব-৪ দারুস সালাম থানাধীন ‘এসআরএম ওভারসিস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে রাশিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের এজেন্সির মাধ্যমে সকল চুক্তি সম্পন্ন করলেও প্রকৃত পক্ষে অন্য একটি এজেন্সির ব্যানারে আর্ন্তজাতিক মানব পাচার চক্রের সঙ্গে হাত মিলায়।
র্যাব-৪ এর ওই কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আর্কষণীয় বেতনে রাশিয়াতে কাজ দেওয়ার নাম করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা এবং গ্রাম থেকে যুবকদের বাছাই করে। অতঃপর তাদের কাছ থেকে ভিসা মারফতে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। তাদের চাহিদাকৃত টাকা প্রাপ্তির পর ভিকটিমদের তারা রাশিয়ায় পাঠায় এবং চুক্তি ভঙ্গ করে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টায় কাজ করার জন্য জোর করে। তারা রাশিয়ান কোম্পানি থেকে প্রাপ্য মাসিক বেতন থেকে ভিকটিমদের টাকা কেটে নেয়।
শাহাবুদ্দিন কবীর বলেন, এই ঘটনায় ভিকটিম দারুস সালাম থানায় একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলার সূত্র ধরে মূল হোতা রুবায়াতসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা প্রায় আট বছরের অধিক সময় ধরে প্রতারণার মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশিদের রাশিয়ায় পাঠিয়েছে এবং পরবর্তীতে তারা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে যাতে ভিকটিমদের বাংলাদেশে ফেরত আসা অথবা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীরা রাশিয়াতে গিয়ে দেখে তাদের পাসপোর্টে এসআরএম যে রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। প্রকৃতভাবে কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরে তারা দেখে যে নোয়াখালী ওভারসিজের মাধ্যমে তারা রাশিয়াতে গিয়েছে এবং পরবর্তীতে তারা সেখানে অত্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের যে চুক্তি চুক্তিকৃত বেতন ৬০০ ডলার সেটা না দিয়ে তাদেরকে ৪০০ ডলার দেওয়া হয়। তাদেরকে বিভিন্নভাবে নিপীড়ন যেমন- খাওয়া-দাওয়া দেওয়া হয় না, একটা রুমের মধ্যে ১২ থেকে ১৪ জন করে থাকে। এটা তারা মনে করেছিল যে একটি সাধারণ ঘটনা হয়তোবা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় যে এই নির্যাতন এবং তাদের বেতন কেটে নেওয়ার পেছনে একটা সুদূরপসারী পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে একটি দেশে ফেরা এবং অন্যটি তুমি যদি বেশি বেতন চাও তাহলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে তুমি যেতে পারো। যেহেতু অনেকে জমি বিক্রি করে, লোন করে টাকা ঋণ নিয়ে তারা রাশিয়াতে যান। পরে কোনো সুযোগ না পেয়ে এই মোটা বেতনের ফাদে পড়ে কয়েকজন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যান। তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতারকরা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে হিসাব আছে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ বাংলাদেশিদের রাশিয়াতে পাঠিয়েছে। কেউই নির্ধারিত সময় তিন বছর থাকতে পারে নাই। তারা দুই, চার, ছয় মাসের মধ্যে আবার বাংলাদেশে ফেরত চলে আসে। কারণ, যারা তাদের শর্তে রাজি হয় তারা থাকতে পারে। আর যারা শর্তে রাজি হয় না তাদেরকে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই চক্রের যেহেতু রাশিয়াতে একটি সিন্ডিকেট আছে সেই সিন্ডিকেট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি এবং তাদের বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
