আধুনিক জাপানি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় অসংখ্য পরিবর্তন এসেছে এবং মূলত ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলির অনুকরণে ঐতিহ্যবাহী জাপানি শিক্ষাগত উপাদানগুলির সাথে মিলিত হয়ে জাতীয় চাহিদা পূরণের জন্য একটি অনন্য জাপানি মডেল তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য কিছু দেশের উচ্চশিক্ষার বিপরীতে, জাপানের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সাধারণত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা, উন্নত জ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু একাডেমিক কৃতিত্বের দিকে নয়, মানব উন্নয়নের দিকেও মনোযোগ দেয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশের প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী জাপানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পড়াশোনা করছেন।
দেশটিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, যেখানে ১০০% বাধ্যতামূলক গ্রেডে ভর্তি এবং শূন্য নিরক্ষরতা রয়েছে। বাধ্যতামূলক না হলেও, উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির হার দেশব্যাপী ৯৬% এরও বেশি এবং শহরগুলিতে প্রায় ১০০%। জাপানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। কম অপরাধপ্রবণ ও গণপরিবহনের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত দেশটি। স্বাস্থ্যবিমাব্যবস্থাসহ কম খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় এখানে। স্বল্প সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করেছে।
জাপানের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তোহকু বিশ্ববিদ্যালয়, কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিস্টিয়ান ইউনির্ভাসিটি, হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়, নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়।
জাপানে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের এক্সামিনেশন ফর জাপানিজ ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট-ইজেইউ, জাপানি ভাষার দক্ষতা পরীক্ষা-জেএলপিটি, ইউনিফাইড/কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স পরীক্ষাসহ কয়েকটি পরীক্ষার মধ্যে একটি দিতে হয়।
ইজেইউ পরীক্ষা
জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে অধ্যয়ন করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের ‘এক্সামিনেশন ফর জাপানিজ ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট-ইজেইউ’ পরীক্ষা দিতে হয়। এটি আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে অধ্যয়নের অন্যতম একটি পরীক্ষার পদ্ধতি। বিজ্ঞানের প্রাথমিক একাডেমিক জ্ঞান, জাপান, বিশ্ব এবং গণিতের জ্ঞান পরিমাপের জন্য এ পরীক্ষা দিতে হয়। এ পরীক্ষা বছরে দুবার হয়। এ পরীক্ষায় পাওয়া স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর।
জাপানের মোট ৪৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ পড়তে চাইলে আবেদনের ইজেইউ স্কোর জমা দিতে বলে। প্রতিবছর জুন ও নভেম্বরে এ পরীক্ষা হয়। ভারতের নয়াদিল্লিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়।
জেএলপিটি পরীক্ষা
জেএলপিটি দেশটিতে ভর্তির জন্য আবেদনকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাপানি ভাষার দক্ষতা পরিমাপের একটি পরীক্ষা। জাপানি ভাষার অক্ষর, শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ সম্পর্কে আবেদনকারী কতটা জানেন এবং এ ভাষায় যোগাযোগের জ্ঞান তাঁদের কতটা, সেটা যাচাই করা হয় এ পরীক্ষায়। এ পরীক্ষা প্রতিবছরের জুলাই ও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। জাপান ছাড়াও পরীক্ষাটি বিশ্বের ৯৬টি দেশে অনুষ্ঠিত হয়।
কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স পরীক্ষা
এ পরীক্ষা জাপানি শিক্ষার্থীদের জন্য। এ পরীক্ষা স্নাতক স্তরে দেশটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষা দিতে হয়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষা দিতে হয় না। কিন্তু কিছু প্রোগ্রামে প্রধানত মেডিকেল ও ডেন্টাল কোর্সে ভর্তির জন্য এটির প্রয়োজন হতে পারে।
ইংরেজিতে দক্ষ প্রমাণে পরীক্ষা
বেশির ভাগ জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের টোয়েফেল, আইইএলটিএস, টোইক বা আইকেনের স্কোর জমা দিতে হতে পারে।
