বলিউডে যুগ পেরিয়ে যুগ এসেছে। অনেক তারকার উত্থান-পতন দেখেছে সিনে-দুনিয়া। কিন্তু সময় যেন থমকে আছে একজনের সৌন্দর্যের সামনে—তিনি রেখা। বলিউডে রেখার মতো দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখার মতো তারকার সংখ্যা খুবই কম।
একজন অভিনেত্রী হিসেবে তিনি মানুষের কল্পনায় জায়গা করে নিয়েছেন। তবে বয়স ৭০ পেরিয়েও টানটান মসৃণ ত্বক, স্নিগ্ধ উপস্থিতি ও ব্যক্তিত্বের দীপ্তি রয়ে গেছে তার। সময়কে কীভাবে এত নিপুণ হাতে থামিয়ে রাখলেন রেখা? সৌন্দর্য চর্চায় কি প্লাস্টিক সার্জারির ছোঁয়া, নাকি রয়েছে অন্য কোনো গোপন রহস্য?
যেখানে বলিউডের অনেকেই যৌবন ধরে রাখতে বোটক্স, ফিলার বা ফেস লিফটের পথ বেছে নিয়েছেন। সেখানে রেখার সৌন্দর্য রয়ে গেছে প্রকৃতির ছোঁয়ায়। তার ত্বকের পরিচর্যায় ভরসা—দক্ষিণ ভারতীয় ঘরানার প্রাচীন ঘরোয়া টোটকা। মায়ের শেখানো সেই নিয়মে এখনো বিশ্বাস করেন তিনি। মুখে ফুসকুড়ি উঠলে বেটে নেন চন্দন। ফেশপ্যাক বানান ডিম, দই আর মধু দিয়ে। বাজারচলতি বিলাসবহুল প্রসাধনীর বদলে ভেষজ উপাদানই তাঁর সৌন্দর্যের প্রধান চাবিকাঠি।

রেখার ডায়েট নিয়েও বলিউডে গুঞ্জন কম নয়। কড়া ডায়েট? মোটেই না। কিন্তু নিয়মে বাঁধা। পাতে থাকে সেদ্ধ ডিম, মরসুমি ফল, শাকসবজি—সব স্বাস্থ্যকর। বাইরের চটকদার খাবারে অনাগ্রহ স্পষ্ট। শুটিং থাকলে নিজের খাবার নিয়ে যান বাড়ি থেকেই। জলপানের গুরুত্ব এতটাই বোঝেন যে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্যের অন্যতম চাবিকাঠি বলেই মনে করেন এক গ্লাস বিশুদ্ধ জল।
চেহারার যত্ন নিতে গেলে ভিতরটা ঠিক রাখা জরুরি—এই বিশ্বাসে জীবন কাটিয়েছেন রেখা। তাঁর মতে, ত্বকে যতই যত্ন নেওয়া হোক না কেন, শরীরের ভিতরটা অসুস্থ হলে সৌন্দর্য টেকে না। তাই প্রত্যেক দিনের অনুশীলনে থাকে যোগাসন, প্রাণায়াম এবং নৃত্যচর্চা। তাঁর জীবন যেন এক নিয়মতান্ত্রিক ধ্যানমগ্নতা। ঘুমের ক্ষেত্রেও কোনও রকম ছাড় নেই—প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা। আর যোগব্যায়াম? সেটাও তাড়াহুড়ো করে নয়—সময়সাপেক্ষ, ধৈর্য্য ও মানসিক শান্তির সঙ্গে।
রেখা নিজেই বলেন, “সৌন্দর্য শুধু বাইরের নয়, ভিতর থেকেও হতে হয় সুন্দর।” বয়স থামানো যায় না, কিন্তু জীবনশৈলীকে যদি নিয়মে বাঁধা যায়, তবেই বয়সকে থামিয়ে রাখা যায় সৌন্দর্যের সীমায়।
বোটক্স, ফিলার, ফেস লিফট—এসব শব্দ যেখানে বলিউডের সৌন্দর্যচর্চায় এখন নিত্যসঙ্গী, রেখা যেন সেখানে অন্য এক দৃষ্টান্ত। প্রকৃতির নিয়ম মেনে, পরিমিত আহারে, সুনিদ্রা আর মানসিক প্রশান্তিতে তাঁর চিরতরুণী রূপ। আর এটাই প্রমাণ করে—চরিত্র, সংযম আর সচেতন জীবনশৈলীই সবচেয়ে বড় ‘বিউটি সিক্রেট’।
