ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন আজ (১৩ নভেম্বর)। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে, তার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশ পল্লীজুড়ে মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জন্মদিন উদযাপন। সকালে সেখানে কেক কাটা ও তার কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা চলবে।

এসব আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, পুত্র নিশাত ও নিনিতসহ নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অসংখ্য হুমায়ূনভক্ত। এমন তথ্য জানিয়েছেন নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল।

ছোটবেলায় হুমায়ূনের ডাকনাম ছিল কাজল। তার বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন একজন লেখক ও পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ১৯৭১ সালে শহীদ হন। মা আয়েশা ফয়জুল হক ছিলেন গৃহিণী। বিখ্যাত লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তার ছোট দুই ভাই।

বাবার বদলিজনিত কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা জীবন কাটান হুমায়ূন। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর গবেষণার মাধ্যমে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন। এই বই তাকে এনে দেয় ব্যাপক খ্যাতি। এরপর একে একে সৃষ্টি করেন অজস্র জনপ্রিয় উপন্যাস, গল্প, নাটক ও চলচ্চিত্র।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, বাদশা নামদার, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তার সৃষ্ট কালজয়ী চরিত্র- হিমু, মিসির আলি, রূপা ও শুভ্র বাংলা সাহিত্যে আজও জীবন্ত।

টেলিভিশন নাটকেও তার অবদান অনন্য। জনপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, নক্ষত্রের রাত প্রভৃতি।

চলচ্চিত্র নির্মাণেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন অগ্রগণ্য। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো হলো- আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া, চন্দ্রকথা ও ঘেটুপুত্র কমলা। এর মধ্যে ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাকে তার প্রিয় আবাস নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয়। বাংলা সাহিত্যের এই কথার জাদুকর আজও কোটি পাঠকের হৃদয়ে বেঁচে আছেন তার সৃষ্টি ও স্মৃতির মাধ্যমে।

DR
আরও পড়ুন