বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে হেপাটাইটিস সি এর অতি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা নিরসনের লক্ষ্যে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল/মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা কর্মসূচি তাৎপর্যপূর্ণভাবে সম্প্রসারিত করেছে। ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ এই সেবার আওতায় ৩০,০০০ মানুষ হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা সেবা পাবে।
এই উদ্যোগটির বাস্তবায়ন করা কঠিন হলেও নিরাময়যোগ্য এ রোগের ঝুঁকিতে থাকা নিজ দেশ ছেড়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হেপাটাইটিস সি চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার সুবিধাকে আরো উন্নত করবে। এমএসএফ এই ‘পরীক্ষা এবং চিকিৎসা’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে থাকা নিজস্ব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে তিনটি নতুন এবং বিশেষায়িত হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
যা এ রোগে আক্রান্ত ক্যাম্পের এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এমএসএফ তাদের জামতলী এবং পাহাড়ের উদ্দি হাসপাতালে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। গতমাসে ‘দ্যা ল্যানসেট গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং হেপাটোলজি’-তে প্রকাশিত ২০২৩ সালের এমএসএফ এর গবেষণায় দেখা যায় যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচজনের একজন এ রোগে আক্রান্ত আনুমানিক ৮৬,০০০ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সক্রিয় সংক্রমণের সাথে বসবাস করছেন, যা আরো বৃহৎ পরিসরে জরুরিভাবে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
‘ক্যাম্পে বিগত আট বছর ধরে বসবাসরত প্রায় দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য হেপাটাইটিস সি চিকিৎসার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত’ বলে জানান এমএসএফের ডেপুটি মেডিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ডা. ওয়াসিম ফাইরুজ।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘হেপাটাইটিস সি এর চিকিৎসা, ক্যাম্পে অতিরিক্ত চাপে থাকা বিদ্যমান অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার নিয়মিত কার্যক্রম প্যাকেজের অংশ নয়। এ ছাড়াও, শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। আর সুযোগ থাকলেও এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্যও তাদের নেই।’
ক্যাম্পের সংকীর্ণ ও জনাকীর্ণ দুর্বিষহ জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাব বা সীমিত ব্যবস্থা এবং আইনি মর্যাদার অভাব তাদের মৌলিক অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে দেয়।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমার এবং বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সি-সহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
জরিপে দেখা গেছে যে, কয়েক দশক ধরে থেরাপিউটিক ইনজেকশনের মতো অনিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতির সংস্পর্শে আসা ক্যাম্পে এই রক্তবাহিত রোগের সংক্রমণের প্রধান ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
