ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রাজশাহীতে ক্রমগতিতে বাড়ছে ‘এইচআইভি’ আক্রান্তের সংখ্যা

আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৬ এএম

রাজশাহীতে ক্রমগতিতে বেড়েই চলেছে ‘এইচআইভি’ আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১০ মাসে ২৮ জন নারী-পুরুষসহ একজন হিজড়া এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে এইডসে মারা গেছেন একজন। 

বিগত পাঁচ বছরের হিসাব বলছে, চলতি বছর ‘এইচআইভি’ আক্রান্তের সংখ্যা মারাত্মক গতি পেয়েছে। আক্রান্তের বেশির ভাগ ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের এই আধিক্য উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। 

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহীতে যৌনকর্মীর চেয়ে সমকামিতায় বেশি ছড়িয়েছে এইচআইভি। গেল ছয় বছরে এইচআইভিতে আক্রান্তের সংখ্যা দঁড়িয়েছে ৯৩ জনে। এ সময়ে এইডসে মারা গেছেন আটজন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারে (টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং সেন্টার) প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন এইচআইভি নমুনা পরীক্ষার জন্য আসেন। যারা পজেটিভ হন তাদের বিভিন্ন কাউন্সিলিং করা হয়। তাদের বোঝানো হয় যে, এই রোগ পুরোপুরি ভালো না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়।

রামেক হাসপাতালের আইটডোরে এইচটিসি সেন্টার চালু রয়েছে। সেখানে এইচআইভির জীবাণু পরীক্ষা করা হয়। খুব অল্প সময়ে দেওয়া হয় রেজাল্ট। এখানে এইচআইভি পজেটিভ হলে রোগীদের বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সেলিং করা হয়। তবে ওষুধের ব্যবস্থা নেই। 

রাজশাহী বিভাগে অন্য সব জেলায় পজেটিভ হওয়া রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) থেকে। সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়।

রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ৭৭ জন মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। বছরটিতে একজনও পজেটিভ ছিল না। তবে পরের বছর ২০২০ সালে এসে দুইজনের শরীরে এইচআইভি জীবাণু পাওয়া যায়। ২০২১ সালে ১ হাজার ৫২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় আটজন এইচআইভি পজেটিভ হন। সে বছরে একজনের মৃত্যু হয়। তবে তিনি এইচআইভি পজেটিভ হওয়ার পরে চিকিৎসার জন্য সময় পাননি। চিকিৎসা শুরুর কিছুদিন পর তিনি মারা যান।

২০২২ সালে ২ হাজার ৩১ জনের মধ্যে আটজন এইচআইভি পজিটিভ হন। এই বছরে একজনের মৃত্যু হয়। মৃত রোগী একই বছরে এইচআইভি পজেটিভ হয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। ২০২৩ সালে ২ হাজার ৩৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪ জন হন পজেটিভ। ওই বছর এইডসে সর্বোচ্চ ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৫৩২ জনের মধ্যে ২৭ জন এইচআইভি পজেটিভ পাওয়া যায়। এই বছরেও তিনজনের মৃত্যু হয়। 

সর্বশেষ ২০২৫ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই বছরের সর্বোচ্চ ২৮ জন এইচআইভি পজেটিভ হয়েছেন। সমকামিতার মাধ্যমে এইচআইভি ছড়িয়েছে ১৭ জনের শরীরে। আর সেক্স ওয়ার্কার ১০ জন পজেটিভ। এ ছাড়া, ব্লাড থেকে একজন সংক্রমিত হয়েছেন। মার্চ মাসে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ২৮ জনের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী ও ১ জন হিজড়া। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এইচআইভি পজেটিভ একজন জানান, পজিটিভ হয়েছে অনেকদিন হলো। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। তবে রাজশাহী হাসপাতালে এইচআইভির ওষুধ পাওয়া যায় না। এখানে শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। পজিটিভ হলে যেতে হয় বগুড়ায়। সেখানে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়। তবে সেখানে যাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। রাজশাহী হাসপাতালে এই ওষুধ পাওয়া গেলে এই রোগীদের জন্য উপকার হবে।

তিনি বলেন, রামেক এইচটিসি সেন্টারে কাউন্সিলিং করা হয়। এই সমস্ত রোগীদের ভালো থাকার বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপর এইচটিসি সেন্টারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে ভালো আছি।

রামেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসারা বলছেন, এখানে এইচটিসি সেন্টার চালু রয়েছে। এখানে শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ওষুধ পাওয়া যায় না। এইচআইভির ওষুধ বগুড়ার শজিমেক থেকে নিতে হয়। রামেক হাসপাতালেও এআরটি সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হবে এআরটি সেন্টার। 

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পার্সন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, এইচআইভি সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে নারী ও পুরুষদের মধ্যে অরক্ষিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ যৌনমিলন, যেমন, নারী-পুরুষে (inter-sexual) অথবা পুরুষে-পুরুষে (homo-sexual) উভয় ধরনের যৌনমিলনের মাধ্যমেই এইচআইভি ছড়ায়। এ ছাড়া, মা থেকে শিশুর এইচআইভি সংক্রমণ হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায়, জন্মগ্রহণের সময় এবং জন্মের পরে মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে।

AHA
আরও পড়ুন