সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল ও নারীদের বোরকা পরা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের রোষানলে পড়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
অনেকেই তাকে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। ‘২০২৪ সালেও কেন মেয়েদের বোরকা পরতে হবে?’-সৈয়দ জামিলের এমন একটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল। ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ’ নামে একটি প্লাটফর্ম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সমসাময়িক থিয়েটারচর্চা নিয়ে নানা কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাট্যকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা কীভাবে ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে আমাদের নাটকটাকে আরও জোরদার করতে পারি-এই কাজগুলো করতে হবে আমাদের। আমাদের অভিনয়ের মান, প্রযোজনার মান বাড়াতে। এই জায়গাগুলো যদি আমাদের ঠিক থাকে, দর্শক যদি আসে বাদবাকি জায়গাগুলো আমরা রাষ্ট্রের কাছে চাইলে, জনগণবান্ধব রাষ্ট্র আছে আমাদের কাছে, ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমাদের বলার দরকার যে, এই জায়গাগুলো আমাদের দরকার।’
নারীদের বোরকা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন শিল্পকলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি সুযোগ পাই, আমি চাইব যেন সেখানে জামায়াত আসে। এজন্য জামায়াত বলুক না, কেন মেয়েকে এখনো ২০২৪ সালে বোরকা পরতে হবে। তারা আমাদের…. কনভিন্স করবে কেন ২০২৪ সালে শরীয়তি রাষ্ট্রব্যবস্থা দরকার। কারণ কুরআনে বলা আছে, ‘তুমি তোমার কোনো নারীর দিকে চোখ পড়লে দৃষ্টি নামাও’। তো আমি যদি দৃষ্টিটা নামাই, তাহলে আমি যদি সংযত হই, আমি যদি দৃষ্টির লাগাম ধরি, তাহলে কেন নারীকে মাথায় বোরকা দিতে হবে? এই কথাটার উত্তর জামায়াতকে দিতে হবে এবং সেটা দাবি করতে হবে”।
সৈয়দ জামিল আহমেদের এ বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরই মধ্যে তাকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
কবি সাইয়েদ জামিল বলেছেন, ‘পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সৈয়দ জামিল আহমেদের এ-ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন রীতিমতো জঘন্য। উনি কি বেগম রোকেয়ার চেয়েও আরও বড়ো নারী জাগরণের অগ্রদূত?বেগম রোকেয়ার একটা বিখ্যাত প্রবন্ধের শিরোনামই ‘বোরকা’; সেইখানে উনি বোরকার যথেষ্ট গুণকীর্তন করেছেন। বোরকা নিয়ে জামিলের গুণকীর্তন করার দরকার নাই। এ পোশাক উনার ভালো না-লাগলে উনি বড়োজোর এটা বলতে পারেন যে, পোশাক হিসেবে বোরকা তার পছন্দ না৷ আমি নিজেও বলি, বোরকা আমার পছন্দ না। পছন্দ না- এক জিনিস, আর তার বিরুদ্ধে বলা আরেক জিনিস। ব্যক্তি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পোশাকের বিরুদ্ধে বলার অধিকারই তো আমার নেই। আমার নয় শুধু, কারোরই নেই। যার যা ইচ্ছা পরবে। পোশাক নিয়ে কূপমণ্ডুকতা নিপাত যাক’।
