বিদেশে থেকে নির্বাচনি প্রচার প্রচারণা চালানো যাবে না এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর নির্বাচনি আচরণবিধি সংশোধন করে এমন বিধান আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা এলেও ফিরছে বিলবোর্ড।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন এলেই দলগুলোর নেতাকর্মী বা সমর্থকরা বিদেশে ভোটের প্রচার করেন। এতে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়। যার কারণে বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। অন্যদিকে, নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাবও বেড়ে যায়। এসব বিবেচনা করেই বিদেশের মাটিতে দেশের নির্বাচনি প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ নিয়ে জানান, এরইমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য একগুচ্ছ সংশোধনী প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংস্থাটি। মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে এলেই গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে।
এদিকে নির্বাচনি প্রচারে পোস্টারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে বিলবোর্ড আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একজন প্রার্থী তার নির্বাচনী আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ডে প্রচার চালাতে পারবেন। প্রচারের জন্য জনসভা, পথসভার কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কোনো যন্ত্রচালিত যানবাহন ব্যবহার বা মশাল ব্যবহার করা যাবে না। জনসভার জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা পূর্বে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে, আর ৪৮ ঘণ্টা পূর্বে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে।
পোস্টারের ব্যবহার তুলে দিয়ে ব্যানারে প্রচার চালানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। এক্ষেত্রে কাপড়ের তৈরি সাদা-কালো ব্যানার টানানো যাবে, যেখানে প্রার্থী ও দলীয় প্রধান ব্যাতীত কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না।
পলিথিনের ব্যবহার রোধ
নির্বাচনি প্রচারে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারে ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বিধিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ব্যানারে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। আগে এ নিয়ে ইসির নির্দেশনা থাকলেও বিধিমালায় কোনো বিধান ছিল না।
মাইকে প্রচারের সময়
নির্বাচনি প্রচারে মাইকের ব্যবহার তথা শব্দদূষণ কমাতে পরিবেশ আইন প্রতিপালনের উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। এক্ষেত্রে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবছে। আগে যা রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল। মাইকের শব্দ অবশ্যই ৬০ ডেসিবলের মধ্যে রাখতে হবে।
অনলাইনে প্রচার ও জনসংযোগ
প্রথবারের মতো অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো আনছে কমিশন। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে সব ধরনের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনসংযোগ করার পাশপাশি অনলাইনে প্রতীক বরাদ্দের পূর্বেও প্রার্থী ও তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভিডিও কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা বিভিন্ন প্রকার প্রচার চালাতে পারবেন ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোন মাধ্যমে প্রচার চালাবেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য ও কবে থেকে প্রচার চালাবেন সে তথ্যও দিতে হবে। এছাড়া অনলাইনে প্রচারের ব্যয়ের হিসাবও প্রতি সাতদিন পরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর অপব্যবহারের থাকছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
এছাড়া, প্রস্তাবিত বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সজ্ঞা সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে, যারা কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে কেবল ভোট দিতে যেতে পারবেন। সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় ব্যানার লিফলেট সাঁটিয়ে দেওয়া যাবে না। টাঙিয়ে প্রচার করতে হবে। আগের মতোই নিষিদ্ধ থাকবে দেওয়াল লিখন।
প্রস্তাবিত বিধিমালায় ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’-এর সজ্ঞাতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পুরো সময়টিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। নির্বাচন পূর্ব সময় বলতে-জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হতে সংসদের সাধারণ নির্বাচন কিংবা কোনো শূন্য আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশন কর্তৃক তফসিল ঘোষণার পূর্ব সময় পর্যন্ত বোঝানো হচ্ছে।
আর নির্বাচনকালীন সময় বলতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হচ্ছে।
আর নির্বাচন পরবর্তী সময় বলতে-গেজেট আকারে ফলাফল প্রকাশের পরবর্তী ৪৫দিন সময় পর্যন্ত বোঝানো হচ্ছে।
নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন ইত্যাদি নিষিদ্ধ না হলেও নির্বাচনকালীন নিষিদ্ধ থাকবে। ভোটারকে ভোটার স্লিপ সরবরাহ করতে কোনো বাধা না থাকলেও প্রার্থীর নাম, ছবি ও প্রতীক ব্যতীত অন্য কিছু উল্লেখ করা যাবে না। উল্লেখ থাকতে হবে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, সংখ্যা ও তারিখ। গেইট, তোরণ নির্মাণের ক্ষেত্রে আগের মতো নিষেধাজ্ঞা থাকছে। জীবন্ত প্রাণী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিধানও বহাল থাকছে। প্রচারে ব্যবহার করা যাবে ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার।
শাস্তি
নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য ব্যক্তি লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান ছিল। এবার সেটা বাড়ানো হচ্ছে। আবার অনলাইন প্রচারে বিধান ভাঙলে ডিজিটাল অথবা সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি হবে। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রার্থী ও দলকে বিধিমালা মেনে চলার প্রত্যায়ন ইসির কাছে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে বিধান লঙ্ঘনের কারণে শাস্তি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকারও করতে হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ড্রোন এবং কোয়াডকপ্টার, এ ধরনের কোনো কিছু কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বা কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। আমরা এআই মিসইউজের ব্যাপারে কঠোরভাবে এখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। প্রবলেমটা হচ্ছে মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, ম্যালইনফরমেশন। এটা একটা সমস্যা যে, মিসইনফরমেশন বলতে বোঝায় মিথ্যা কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। যেটা আমাদের ক্যাজুয়াল বিহেভিয়ারের জন্য হয়ে থাকে।
টানা ৩৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে ঢাবির সব প্রবেশপথ