ইসির সংলাপে মিডিয়ার প্রতিনিধিরা যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে দিনব্যাপী সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরেন। 

ডিবিসি নিউজের লোটন একরাম, দীপ্ত টিভির এস এম আকাশ, এটিএন বাংলার একরামুল হক সায়েমসহ অনেকেই সাংবাদিকদের জন্য বর্তমান নীতিমালা সংশোধন করে ভোটকেন্দ্রে অবাধে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

এস এম আকাশ মূলধারার মিডিয়াকে অবাধ বিচরণের সুযোগ দিতে বলেন। একাত্তর টিভির শফিক আহমেদ গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

একরামুল হক সায়েম অনিয়ম হলে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলার ও ইন্টারভিউ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মোস্তফা আকমল এআই ব্যবহার করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলেন। আনন্দ টিভির জয়নাল আবেদিন ও সিইসিও এআই-এর অপব্যবহার রোধে গুরুত্ব দেন।

গ্লোবাল টিভির ফেরদৌস মামুন এবং বৈশাখী টিভির জিয়াউল কবীর সুমন ভোট গণনার সময় দীর্ঘ হলেই সন্দেহ তৈরি হয় উল্লেখ করে দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো রোধ করার পরামর্শ দেন।

শফিক আহমেদ নির্বাচন কমিশনের স্ট্যাটাস বাড়িয়ে মন্ত্রীর উপর মর্যাদা দেওয়ার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।

যমুনা টিভির তৌহিদুল ইসলাম মাঠ পর্যায়ের পুলিশ ও আমলাদের কোনো পক্ষের না হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে বলে মত দেন। অন্যথায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

গ্রীন টিভির মাহমুদ হাসান ভোটে অনিয়ম করলে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। সময় টিভির জহুরুল ইসলাম জনি অনিয়মের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন।

এটিএন নিউজের শহিদুল আজম, নিউজ ২৪-এর শরিফুল ইসলাম খান, স্টার নিউজের ওয়ালিউর রহমান মিরাজসহ অনেকেই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন।

জিটিভির গাউসুল আজম বিপু সাধারণ মানুষ যেন ভোট দিতে আসে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং ভোট চুরির সঙ্গে যুক্তদের বিষয়ে মনোযোগী হতে বলেন।

চ্যানেল আইয়ের জাহিদ নেওয়াজ খান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

মাইটিভির মাহবুব সৈকত কালো টাকার মালিক ও ব্যাংক লুটেরাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

সাংবাদিকরা মনে করেন, আগামী নির্বাচন কঠিন হবে এবং নির্বাচন ভালো না হলে কমিশন হেরে যাবে। সামগ্রিকভাবে, সংলাপে উঠে আসা দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সহায়ক হবে বলে আশা করেন সাংবাদিকরা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতা ছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠন ও নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি প্রবাসী ভোটার, সরকারি চাকরিজীবী ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কথাও বলেন।

সিইসি আরও বলেন, এআই-এর অপব্যবহার রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ‘আয়নার মতো স্বচ্ছ’ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন।

DR