ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বিএনপির সাবেক মহাসচিবের পরিবারকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম

বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারকে জিম্মি করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় ও চেক নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার(৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে হাতিরঝিল থানাধীন নয়াটোলা গ্রীনওয়ে এলাকার একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, চাঁদাবাজরা স্থানীয় যুবদলের সঙ্গে জড়িত। যুবদলের পরিচয় দিয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য করেছে। বাসায় নগদ টাকা না থাকায় মগবাজারে বুথে নিয়ে টাকা উত্তোলন ও পরে বাসায় আরও ২০ হাজার টাকার একটি চেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে নিয়েছে চাঁদাবাজরা।

এঘটনায় মরহুম খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পুত্র মরহুম খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলুর স্ত্রী ভুক্তভোগী তানজিন হামিদ মিতুল। হাতিরঝিল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তিনি।

থানা সূত্রে জানা গেছে,  যুবদল নেতাকর্মী পরিচয়ে শুক্রবার রাতে ৮০ হাজার টাকা এবং ২০ হাজার টাকার একটি চেক আদায় করা হয়।

থানায় জমা দেয়া লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে কথিত যুবদল কর্মী শাওন (২৫), হাবিব (৩৫), সাজিদ (২২) ও সানি (৩৫) হাতিরঝিল থানার নয়াটোলার ফ্ল্যাটে গিয়ে চাঁদা দাবি করে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগকারী তানজিন হামিদ মিতুল গণমাধ্যমকে জানান, ‘শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আমার বড় বোন শারমিন ওয়াদুদ নিপা আমাকে ফোন করে জানান যে, তার জরুরি ভিত্তিতে এক লাখ টাকা প্রয়োজন। রাত ১১টা ২০ মিনিটে আমি তার বাসায় গেলে দেখি, চার যুবক সেখানে উপস্থিত।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানতে চাই কেন তারা সেখানে এসেছে। তখন চাঁদাবাজ শাওন কোমরে থাকা দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। তারা আমার বড় বোনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলি তুমি চিনো আমাদের? আমরা কারা? তখন উলটো তারা আমাদেরকে বল, আপনি বুঝতেছেন না? এখন সময়টা কি? আর কেন আসছি আমরা? মরহুম ডাবলু ও খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিচয় দেবার পর তারা আরও খারাপ আচরণ করতে থাকে। টাকা দিতেই হবে।’ 

তানজিন হামিদ মিতুল বলেন, তারা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। মোবাইল কেড়ে নেয়। কাউকে ফোন করতেও দেয়নি। বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। বাসায় নগদ টাকা নেই বলার পর তারা বুথ থেকে টাকা তুলে দিতে বলে।

মিতুল বলেন, ভয়ে আমি রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে মগবাজার সিটি ব্যাংকের বুথ থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে সানিকে দিই এবং আরও ২০ হাজার টাকার একটি চেক (চেক নং ৪১০৩১৭৩) প্রদান করি।

তিনি বলেন, পরের দিন শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে তারা আবারও আমার বড় বোনের বাসায় আসে এবং ফ্ল্যাট খালি করার জন্য হুমকি দেয়। তারা বলে, আগামী মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট খালি না করলে আমার বোন ও তার সন্তানদের হত্যা করা হবে।

তানজিন হামিদ মিতুল জানান, ‘আমি আমার শ্বশুর খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিচয় দিয়েছি। আমার স্বামী খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু এবং দেবর আকতার হামিদ পবনের পরিচয়ও দিয়েছিলাম। এরপরও তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে।’

তিনি অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে বলেন, ‘অভিযুক্তরা যুবদলের স্থানীয় আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছে। ওরা চলে যাবার পর আমরা আত্মীয়-স্বজনদের জানাই। বাসায় একজন পুলিশ অফিসার থাকেন তাকেও জানাই। সবাই হতভম্ব। ওই রাতেই আমরা সেনাবাহিনীকে জানাই। তারা থানায় অভিযোগ দেবার পরামর্শ দেন। পরদিন শনিবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আমরা হাতিরঝিল থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দিই।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দু-দিন পার হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এখন পর্যন্ত অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্তই হয়নি। তবে ওনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু বলেন, অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্তসহ রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। মামলা নেয়া হবে ও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপি ষষ্ঠ মহাসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা-১ ও মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) আসন থেকে মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

DR/FJ
আরও পড়ুন