জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় শেষ মুহূর্তে সংশয় তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কিছু বিষয় এখনো অস্পষ্ট। ফলে সনদে সইয়ের ঠিক আগমুহূর্তে আমাদের মধ্যে কিছু সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। জাতিকে অস্পষ্টতার মধ্যে রেখে কোনো উদ্যোগ সফল করা সম্ভব নয়। আমরা ১৬ জুলাই যে খসড়াটি পেয়েছি, সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সম্পর্কিত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।’
‘নোট অফ ডিসেন্ট’গুলোর বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরির দাবি জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘এগুলোর একটি পরিষ্কার সংজ্ঞা থাকা জরুরি। পাশাপাশি, কীভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে- তা নিয়েও একটি স্পষ্ট পথনকশা প্রয়োজন।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো জুলাই সনদের বাস্তবায়নের পথটি পরিষ্কার করা। সব কিছু স্পষ্ট হওয়ার পরই আমরা সনদে স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হবো। যখন পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না, তখনই স্বাক্ষর হবে- এবং সেটিই হবে আমাদের প্রকৃত সাফল্য।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন জবাবদিহিতামূলক ও গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে পারে- এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ঐক্যবদ্ধ কমিশনের অধীন রাজনৈতিক দলগুলো একটি অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে, সহনশীল ও গঠনমূলক পরিবেশে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছি এবং সনদ প্রণয়নের দিকে এগিয়ে গেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমেই এসেছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে আলোচনা করেছি এবং সেখানে কোনো ধরনের সুস্পষ্ট বিকৃতি হয়নি। আমরা বাস্তবায়নের জন্য একটি আদেশের কথা বলেছি। যদি সেটির নামকরণ ‘সাংবিধানিক আদেশ’ হিসেবে করা হয়, তাহলে তা অনেক পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্যতার জায়গা তৈরি করবে।’
আখতার হোসেন বলেন, আমরা জাতীয় নাগরিক কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছি সেটি ‘জুলাই আদেশ’ বা ‘সাংবিধানিক সংস্কার আদেশ’, যেকোনো নামেই হোক না কেন, আমরা সেটিকে বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা মনে করি, এ আদেশ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি সরকারের প্রধান, তিনিই জারি করবেন। এবং জনগণের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় ইতিমধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে, সেটিকে বাস্তব রূপ দিতে তিনি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে এ আদেশ বাস্তবায়ন করবেন, এই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করছি।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমরা যে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছি, সেই গণভোটের প্রশ্ন এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। গণভোটের দিন-তারিখসহ বিষয়গুলো জাতির কাছে এবং আমাদের কাছেও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের এতগুলো মৌলিক বিষয় পরিবর্তনের যে প্রস্তাব আমরা করেছি, তা শুধুমাত্র সংশোধনের মাধ্যমে টেকসই করা সম্ভব নয়; এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তাই মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার স্বাক্ষর করার পরই পরবর্তী নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্ষমতার অধিকারী হবেন। সংসদ সদস্যরা ‘কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার’র দায়িত্ব পাবেন, এই বিষয়টিও আমাদের কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
আখতার হোসেন বলেন, নতুন সংবিধান অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, সেটি ‘সংস্কার সংবিধান’ হিসেবে বিবেচিত হবে— এ বিষয়টিও আমরা ঐকমত্যে নিশ্চিত করেছি। আমরা কমিশনে বহু আলোচনা করেছি, এবং মতভেদ থাকা সত্ত্বেও জাতির স্বার্থে এখানে একত্র হয়েছি। ঐকমত্য কমিশনও ধৈর্য ধরে আমাদের বক্তব্য শুনেছে।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ থাকতে হবে: সালাহউদ্দিন