নির্বাচন কমিশনের (ইসি) খসড়া আচরণবিধি, নির্বাচনি প্রস্তুতি, তদন্ত প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি অভিযোগ করেছে, আচরণবিধির নানা অস্পষ্টতা ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ইসির বাস্তবায়ন সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। একই সঙ্গে তরুণ ভোটার, প্রবাসী ভোটার, সাইবার নিরাপত্তা এবং গণভোটের প্রক্রিয়া নিয়েও তারা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে ইসির আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে এসব মন্তব্য করে এনসিপি। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। উপস্থিত আছেন অন্য চার কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দল জোট করলেও যেন নিজের প্রতীকেই ভোট করে ইসির এই সিদ্ধান্তে যেন অটল থাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানাবো। একটা সুযোগ এসেছে নিজ দল নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার। প্রতিটির দলের জন্য একজন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট করে দিলে আমরা সহজে যোগযোগ করতে পারবো। আমাদের সিরিয়াস কনসার্ন হচ্ছে, ভোটের দিন যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? আমাদের দাবী তাদেরও ভোটার তালিকায় নিয়ে আসা। এটা না করলে তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।
তিনি বলেন, গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে সেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা জানাবেন। এতে আমরা কাজ করতে পারবো। আপনাদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দিহান আছি। আপনাদের আমরা সহযোগিতা করবো। অন্যরাও সহযোগিতা করলে আমরা একটা ভালো নির্বাচন পাবো।
এই নেতা বলেন, কমিশন যদি স্বকীয় সত্তা বজায় রেখে, তাহলে ইসি যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা মেনে চলার চেষ্টা করবো। সময় খুবই স্বল্প, গণভোট নিয়ে সরকারের কাছে নির্দেশনা চাইতে পারেন।
আমাদের নারীরা প্রতিদিন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম যেহেতু অংশ নেবে উৎসবমুখর করতে বাহিনীগুলোকে অ্যাকটিভ করবেন। আরেকটা বিপ্লবের দিকে যেতে হলে তা আমাদের কারো জন্য সুখকর হবে না।
যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘খসড়া আচরণবিধি প্রণয়নকারীদের ভোট প্রক্রিয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই—এটা স্পষ্ট। তার অভিযোগ, আচরণবিধি এমনভাবে করা হয়েছে যে তা নিপীড়নমূলক আইনে পরিণত হতে পারে। কোথায় লঙ্ঘন হলে কোন তদন্ত কমিটি কাজ করবে, কমিশন কীভাবে অভিযোগ নেবে বা কত সময়ের মধ্যে প্রার্থিতা বাতিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে এসবই অস্পষ্ট। তফসিলের পর এত জটিল প্রক্রিয়া সামলানোর সক্ষমতা কমিশনের নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে ছট বা কাপড়ের ব্যানার–ফেস্টুন করার নির্দেশনা অধিকাংশ দল, বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য অবাস্তব। এতে কাঠামোগতভাবে পুরোনো শক্তির সুবিধা পাবে।
দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার না করার বিধানকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন এটা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারলে ইসির সক্ষমতা প্রমাণ হবে।
বিলবোর্ড কাপড়ে করার নির্দেশনা ‘প্র্যাকটিক্যাল নয়’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। দলের ব্যয়সীমা ৫০ লাখ টাকা হলেও একটি বড় বিলবোর্ড করতে ২০ লাখ টাকা লাগে ফলে প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মাইকে ৬০ ডেসিবল শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও তা পরিমাপের যথাযথ যন্ত্র মাঠে নেই। নির্বাচন ঘনালে অস্ত্রের ঝনঝনানি ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার মতো সক্ষমতা ও সদিচ্ছাও ইসির নেই।’
তরুণ প্রার্থীদের সুযোগ বাড়াতে মুসা এক মঞ্চে মন্ত্রী–এমপি ও প্রভাবশালীদেরও বিতর্কে আনার প্রস্তাব করেন, যাতে ভোটের ওপর পেশিশক্তি বা কালোটাকার প্রভাব কমানো যায়।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, ‘প্রবাসী ভোটারদের জন্য অঞ্চলভেদে পাঁচদিন সময় যথেষ্ট নয় সব জোনের জন্য ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো উচিত। নিবন্ধনের সময় এনআইডি বা পাসপোর্ট কেবল স্ক্যান নয়, ম্যানুয়াল তথ্যও দেওয়া যায় এবং ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন থাকা প্রয়োজন।’
তিনি নারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন।
