যেমন ছিলো রাসুলের (সা.) বিজয় উদযাপন 

আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৫ এএম

বিজয় কেবল ভৌগোলিক স্বাধীনতা নয়। বিজয় মানে জালিমের শৃঙ্খল ভেঙে আত্মমর্যাদা, ন্যায় ও স্বাধীনতার আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির মহান বিজয় দিবস। ইসলাম বিজয়ের মুহূর্তকে সঠিক পথনির্দেশ— কৃতজ্ঞতা, বিনয় ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে অর্থবহ করে তুলতে শেখায়।

ইসলাম কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর ন্যায়সঙ্গত বিজয়কে উদযাপনে উৎসাহিত করে। দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয় উপলক্ষে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশই দেয় ইসলাম।

মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে সূরা ফাতহ অর্থাৎ‘বিজয়’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাজিল করেছেন। আবার অন্য আয়াতে বিজয় লাভের পর করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং বিজয়ের স্বাদ কীভাবে গ্রহণ করতে হবে—সে বিষয়ে ইসলাম মানুষকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

বিজয় দিবস ইসলাম ও মুসলমানদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচারের কারণে নিজ মাতৃভূমি মক্কা থেকে নির্যাতিত হয়ে আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে সময় তিনি অশ্রুসিক্ত বদনে বারবার জন্মভূমির দিকে ফিরে তাকিয়ে বলেছিলেন—

‘হে মক্কা! কতই না পবিত্র ও উত্তম শহর তুমি এবং আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। আমার স্বজাতি যদি তোমার হতে আমাকে বিতাড়িত না করত তবে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোথাও বসবাস করতাম না।’ (তিরমিজি ৩৯২৬)

প্রিয়নবীর এই বুকফাটা আর্তনাদের অবসান ঘটে ৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে। দীর্ঘ দশ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তিনি বিজয়ের বেশে নিজ মাতৃভূমি পবিত্র মক্কা নগরী পুনরুদ্ধার করেন। তিনি যেমন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন, তেমনি তার সঙ্গে যারা নির্যাতিত হয়েছিল—তারাও বিজয়ের আনন্দে শামিল হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যাদের নেতৃত্ব, ত্যাগ ও রক্তদান ইতিহাস সৃষ্টি করেছে—সেই সব বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দোয়া।

বিজয় দিবসে আনন্দ উদযাপন, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বরং ইতিহাস বিকৃত না করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করা জরুরি। পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণ ও তাঁদের জন্য দোয়া-মোনাজাত করা প্রতিটি নাগরিকের ইমানি দায়িত্ব।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সা.) বিনয়ের সঙ্গে মাথা নত করে উটে আরোহন অবস্থায় নগরীতে প্রবেশ করেন। প্রথমেই তিনি হজরত উম্মে হানী (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করে আট রাকাত নামাজ আদায় করেন, যা সালাতুল ফাতহ (বিজয়ের নামাজ) নামে পরিচিত। এটি ছিল বিজয়ের মুহূর্তে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনের একাধিক স্থানে বিজয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে সুরা আন-নসরে বিজয়-পরবর্তী করণীয় স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এ সুরার নির্দেশনা অনুযায়ী বিজয়ের ৪টি করণীয়। 

মহান আল্লাহ বলেন—‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে—তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করো, তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।’ (সুরা আন-নসর: আয়াত ১–৩)

এই সূরায় বিজয়ের পর চারটি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে—

১. বিজয়কে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনে করা

বিজয় আল্লাহর অনুগ্রহ। মানুষের অবদান স্বীকার করলেও মূল কৃতিত্ব আল্লাহর কাছে ন্যস্ত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না।’ (তিরমিজি ১৯৫৫)

২. ফাসাব্বিহ— আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা।

বিজয়ের আনন্দে মহান আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে।  বিজয়ের আনন্দে বলতে হবে— ‘সুবহানাল্লাহ’।

৩. বিহামদি রব্বিক— আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

মহান রবের হামদ তথা শুকরিয় আদায় করা। বিজয়ের আনন্দে শুকরিয়া আদায় করে বলতে হবে— ‘আলহামদুলিল্লাহ’।

৪. ওয়াসতাগফির— যুদ্ধের সময়ের ভুলভ্রান্তি তথা সীমালঙ্ঘন থেকে রবের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

বিজয় দিবসে সব অহংকার থেকে মুক্ত থাকতে বিজয়ের ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাতেই বিজয় হবে স্থায়ী।

HN
আরও পড়ুন