রক্তদান একটি মহৎ গুণ। কিন্তু রোজা রেখে রক্ত দান করলে রোজা হবে কিনা তা নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই সংশয় থেকে যায়। বিশেষ প্রয়োজনে অসুস্থ ব্যক্তিদের রক্ত দেয়া সওয়াবের কাজ। এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে দুই বা তারও বেশি মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। রোজায়ও রোগীর জরুরি রক্ত দরকার হয়। তবে রোজা থাকা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত দিলে রোজা ভাঙে না।
ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, রোজা রেখে প্রয়োজনে নিজ শরীরে রক্ত নিলে বা নিজ শরীর থেকে অন্য কাউকে রক্তদান করলে কোনো অবস্থাতেই রোজা নষ্ট হবে না। কারণ, রক্ত দেয়ার কারণে যেমন কোনো বস্তু দেহের ভেতরে ঢুকেনি, তাই তাতে রোজা নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
আবার রোজা রেখে নিজে রক্ত নিলে যেহেতু এ রক্ত শরীরের উল্লেখযোগ্য চার নালির কোনো নালি দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে না, বরং শরীরের অন্যান্য ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে; সুতরাং রোজাবস্থায় কারও শরীরে রক্ত দান করলে বা নিজে রক্ত গ্রহণ করলেও রোজা নষ্ট হবে না।
তবে এমন বেশি পরিমাণে রক্ত দেয়া মাকরুহ; যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে। (আল কাসানি ২/৯২, ইবনে আবিদিন ৩/৪০০, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২০০)
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখে সিঙ্গা লাগিয়েছেন। তা হাদিসে বর্ণিত আছে। সিঙ্গার মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত রক্ত বের করা হয়। তাই রোজা রেখে নিজের টেস্ট/পরীক্ষার জন্য কিংবা কোনো রোগীকে দেয়ার জন্য রক্ত দিলে-- রোজার ক্ষতি হবে না।
রোজা রেখে নিজের টেস্ট/পরীক্ষার জন্য কিংবা কোনো রোগীকে দেয়ার জন্য রক্ত দিলে, রোজার ক্ষতি হবে না।
দুর্বল লোকদের জন্য রোজা অবস্থায় অন্য রোগীকে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়। আর এমন সবল ব্যক্তি যে রোজা অবস্থায় অন্যকে রক্ত দিলে রোজা রাখা তার জন্য কষ্টকর হবে না সে রক্ত দিতে পারবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
রোজা অবস্থায় চিকিৎসার প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া বা ব্লাড টেস্ট করানো সম্পূর্ণ বৈধ। তবে স্বেচ্ছায় রক্তদান করলে দুর্বলতার আশঙ্কা থাকলে তা এড়িয়ে চলাই উত্তম।
রোজার দিনগুলোয় রক্তদানের পর ২-৪ ঘণ্টা ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন শারীরিক পরিশ্রম, সাইকেল চালানো, অধিক উচ্চতায় কাজ করা ইত্যাদি। রক্তদান–পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা তরলজাতীয় উপাদান যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, খাওয়ার স্যালাইন, নরমাল পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ লিটার বেশি খেতে হবে।
মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ একজন ব্যক্তি রক্তদানের জন্য উপযুক্ত। রক্তদানের আগের রাতে ৬-৮ ঘণ্টার ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঘুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারপরও কোনো রকম অসুবিধা হলে রক্তদান কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া যাবে কিনা?