আল কোরআন মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ও মহান আল্লাহর শাশ্বত বাণী। এ জন্য সফল, সুন্দর, শুভ্র ও শুদ্ধ জীবন গঠনে কোরআন অনুধাবন করা আবশ্যক ও অপরিহার্য। এটি মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই মানবিক ও ধর্মীয় দিক থেকে কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ কোরআনকে আত্মিক রোগের নিরাময়, পথনির্দেশক এবং বিশ্বাসীদের জন্য রহমত হিসেবে বর্ণনা করেছেন (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭)।
কোরআনের আলোকে সমৃদ্ধ জীবন করতে চান খবর সংযোগের এমন পাঠকদের জন্য এই প্রতিবেদনে কোরআনের মাধ্যমে জীবন সমৃদ্ধ করার সাতটি উপায় তুলে ধরা হলো-
কোরআন পাঠ করা
সঠিক তাজবিদসহ কোরআন পাঠ করলে আত্মা শান্তি অনুভব করে, আল্লাহর নৈকট্যবোধের অনুভূতি দেয়, ঘর বরকতময় হয়, এবং মানসিক চাপ কমিয়ে দুঃখ বা শোক লাঘব করে। ফজরের পর প্রতিদিন কয়েক পৃষ্ঠা কোরআন পাঠ করা সৎ পথ অনুসরণের ভালো উপায়।
আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আল-আস (রা.) বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের প্রতি মনোনিবেশী, তাকে কিয়ামতের দিন বলা হবে, পড়ো এবং উচ্চস্থান লাভ করো। তুমি যেমন দুনিয়াতে পড়তে, তেমন পড়ো। তোমার স্থান হবে সেই আয়াতে, যা তুমি শেষবার পাঠ করবে।’ (আবু দাউদ: ১,৪৬৪; তিরমিজি: ২,৯১৪)
অনুবাদ ও তফসির পড়া
কোরআন সঠিকভাবে বুঝলে আমরা বাস্তবতার একটি ভালো ধারণা পেতে পারি। বিশেষজ্ঞ স্কলারের রচিত কোরআনের সুন্দর অনুবাদ এবং তফসির পড়তে পারেন। তফসির কোরআনের গোপন রহস্য গুলি উন্মোচন করতে সাহায্য করে এবং শব্দ, আয়াত ও সুরার গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়।
কোরআন মুখস্থ করা
আল্লাহর মহিমাময় বাণী আপনার হৃদয়ে স্থান পেলে রাতের দীর্ঘ নামাজেও ক্লান্তি অনুভব করবেন না। কোরআনে বর্ণিত নানা ঘটনার সঙ্গে জীবনের মিল খুঁজে পাওয়া যায় তখন, প্রতিদিন হৃদয়ে সেই সব আয়াত বাজতে থাকে। ফলে দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে আপনার এক ধরনের অন্তর্দৃষ্টি লাভ হবে। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি কোরআন থেকে কোনো অংশ মুখস্থ করে না, সে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের মতো।’ (তিরমিজি: ২,৯১৩)
মনোযোগ দিয়ে কোরআন শোনা
ভ্রমণে বা হাঁটতে হাঁটতে কিংবা অবসরে বসে বিশুদ্ধ কোরআন পাঠ শুনতে পারেন। অথবা কোনো আলেমের রেকর্ডেড ব্যাখ্যা শুনুন। কোরআনের কোর্স বা ক্লাসেও যুক্ত থেকে মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করা যায়। এটি এমন এক আধ্যাত্মিক জগতের সন্ধান দেবে আপনাকে, যা ব্যাখ্যার অতীত।
কোরআন অনুযায়ী জীবনাচরণ
দৈনন্দিন জীবনে কোরআন অনুসরণ করুন। কোরআন পথনির্দেশনা হিসেবে মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়েছে, শুধু পাঠ বা মুখস্থ করার জন্য নয়। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ইবাদতে যদি কেবল কোরআন পড়েন এবং শেখেন, আর আদেশগুলো অনুসরণ না করেন, তাহলে তা কিয়ামতের দিন আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
অন্যদের কোরআন শেখানো
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সে, যে কোরআন শেখে এবং অন্যদের তা শেখায়।’ (বুখারি: ৫,০২৭)
বাস্তবেও কোরআন প্রচার করা খুব কঠিন কাজ নয়। বন্ধুদেরকে চায়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে কিছু আয়াত পড়ুন এবং তার অনুবাদ ও তফসির নিয়ে আলোচনা করুন। অথবা দেখুন, আপনার কোনো প্রতিবেশী কোরআন শিখতে চান দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু সুযোগ করতে পারছেন না। তার সঙ্গে আলাপ করে একটি সময় বের করে নিন।
‘আহলুল কোরআন’ হওয়া
‘কোরআন আসর’ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন, যারা হবেন কুরআনপ্রেমী, আহলুল কোরআন। এর মাধ্যমে মুসলিম-প্রতিবেশে একটি অবর্ণনীয় সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি করা সম্ভব। এই প্রেম নিখাদ এবং শুধু আল্লাহর জন্য, আল্লাহ নিশ্চয় এর সর্বোত্তম প্রতিদান আপনার জীবনে দেবেন।
কোরআন বহু মানুষের জীবনকে উজ্জ্বল রঙে পূর্ণ করেছে, আত্মাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেছে এবং আল্লাহর কাছাকাছি থাকার অনুভূতি দিয়েছে। আপনি কি সেই সুন্দর অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে চান? তাহলে কোরআনের কাছে আসুন, কোরআনকে ভালোবাসুন। সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট কম
রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়গুলো কখন?
যে কারণে রমজানে বেশি বেশি দান করতেন রাসুল (সা.)
ঘোড়ার গোশত খাওয়া নিয়ে হাদিস যা বলে
ফিতরা কত, জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন