ইসলাম ধর্মে দান ও সদকার রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দানের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন বলা হয়েছে- তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বল, ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত’। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।- (সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৯)
আল্লাহ আরও বলেন- যারা দিনে বা রাতে, প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, আল্লাহর পথে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৭৪)
এ ছাড়া, গোপনে দানের ফজিলত আরও বেশি বলে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তা ভালো; কিন্তু গোপনে দরিদ্রকে দান করো, সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৭১)
হাদিসে দানের গুরুত্ব
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে- সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান, এবং সেই সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৩১০)
অন্য এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন- সর্বোত্তম দান হলো সেই দান, যা করার পরেও তুমি অমুখাপেক্ষী থাকো। ‘উপরের হাত’ নিচের হাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এবং আগে দান করো তাদের, যাদের ভরণপোষণ তোমার দায়িত্ব। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৬৪)
এতে বোঝা যায়, নিজের পরিবার-পরিজনের কষ্টের বিনিময়ে দান করা প্রশংসনীয় নয়।
আলাদা করে রাখা দানের টাকা খরচ করা যাবে কি?
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, কেউ যদি দান করার নিয়তে টাকা আলাদা করে রাখেন, কিন্তু পরবর্তীতে জরুরি কোনো ব্যক্তিগত প্রয়োজন দেখা দেয়- তাহলে সেই টাকা নিজ প্রয়োজনে খরচ করা নাজায়েয নয়। কারণ শুধুমাত্র দানের নিয়ত করলেই টাকা ব্যক্তির মালিকানা থেকে বের হয়ে যায় না। সুতরাং, সেই টাকা খরচ করা বৈধ।
তবে যেহেতু দানের উদ্দেশ্যে তা পৃথক করা হয়েছিল, তাই সম্ভব হলে পরবর্তীতে সমপরিমাণ টাকা দান করে দেওয়াই হবে উত্তম। কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে- সদকা রবের ক্রোধকে নিবারণ করে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৩০৯; শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩০৮০)
সার্বিকভাবে বলা যায়, ইসলাম ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও দায়বদ্ধতার গুরুত্বের পাশাপাশি দান-সদকার প্রতি উৎসাহ দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথ নির্দেশনা দেয়।
