আজানের আগে দরুদ পড়া সুন্নাহ নাকি বিদআত

আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

ইসলামের অন্যতম শিআর বা প্রকাশ্য আলামত হলো আজান। যা মুসলমানদের নামাজের আহ্বান হিসেবে নির্দিষ্ট বাক্য ও পদ্ধতিতে আদায় করা হয়। দরুদ শরিফও একটি মহান ইবাদত, যার গুরুত্ব কোরআন ও হাদিসে বারবার এসেছে। তবে দেশের কিছু জায়গায় একটি রীতি দেখা যাচ্ছে, হালো- আজানের আগে উচ্চস্বরে দরুদ পাঠ। প্রশ্ন হচ্ছে- এই আমল কি রাসুলুল্লাহ (স.) ও সাহাবাদের যুগে ছিল? শরিয়তের আলোকে এর স্থান কোথায়?

আজানের সুন্নত ও প্রমাণ
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনীতে আজানের আগে বিশেষভাবে দরুদ পড়ার কোনো প্রমাণ নেই। বরং সহিহ হাদিসে এসেছে-
فَإِذا حضرت الصَّلَاة فليؤذن لكم أحدكُم
‘যখন নামাজের সময় হয়, তখন তোমাদের একজন আজান দাও।’ (মেশকাত: ৬৮৩)

আজানের পর রাসুল (স.)-এর প্রতি দরুদ ও বিশেষ দোয়া পাঠের কথা সহিহ হাদিসে বর্ণিত (সহিহ মুসলিম: ৩৮৪)। কিন্তু আজানের আগে দরুদ পাঠের নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

আলেমদের বক্তব্য
ইমাম কাসানি (রহ.) বলেন, ‘আজানের জন্য নির্ধারিত সময়ে অন্য কোনো জিকির বা দরুদ শরীয়ত সমর্থন করে না।’ (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৫২)

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘আজানের সময় মুয়াজ্জিনের জন্য সুন্নত হলো সরাসরি আজান শুরু করা।’ (আল-মাজমু: ৩/১১২)

এই বক্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট, আজানের আগে নির্দিষ্টভাবে দরুদ পাঠ করা সুন্নত নয়।

বিদআত কি না: ফিকহি বিশ্লেষণ
বিদআতের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসুল (স.) ও সাহাবিদের আমল থেকে প্রমাণ ছাড়া নতুন কিছু যোগ করা হলে তা বিদআত হিসেবে গণ্য হয়। আজানের আগে দরুদ পাঠকে অধিকাংশ আলেম নিম্নলিখিত কারণে বিদআত বলেছেন—
১. শরিয়তের সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই: কোরআন বা সহিহ হাদিসে এর কোনো নির্দেশনা নেই।
২. সুন্নাহর ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন: আজানের নির্ধারিত বাক্য ও পদ্ধতির আগে নতুন কিছু যোগ করা।
৩. সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িদের আমলের বিপরীত: প্রথম যুগে কেউ এই আমল করেননি।

প্রচলন হলো কীভাবে
ঐতিহাসিকভাবে ধারণা করা হয়, মানুষকে দরুদ পাঠের প্রতি উৎসাহিত করা বা আজানের জন্য সতর্ক করার উদ্দেশ্যে এই প্রথা শুরু হয়েছিল। যদিও উদ্দেশ্য ভালো হতে পারে, কিন্তু ইবাদতে নতুনত্বের অনুমতি নেই, যদি তা নবী (স.) থেকে প্রমাণিত না হয়।

আজানের সঙ্গে দরুদ পাঠের সুন্নাহ 
আজান শোনার পর রাসুল (স.) -এর প্রতি দরুদ পাঠ (সহিহ মুসলিম: ৩৮৪)

মোটকথা, আজান এবং দরুদ উভয়ই মহান ইবাদত। কিন্তু আজানের আগে উচ্চস্বরে দরুদ পাঠ সুন্নাহ নয়, বরং অধিকাংশ আলেমের মতে এটি বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। মুসলিমদের উচিত ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং নতুন প্রথা এড়িয়ে চলা।

আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর সবাইকে ছোট-বড় সব বিষয়ে নবীজির (সা.) সুন্নাহ অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

MMS
আরও পড়ুন