আগামী ৫ নভেম্বর নির্বাচন কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় চষে বেড়াচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাদের দুজনের পক্ষে প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে ট্রাম্প–সমর্থক ইলন মাস্কের মতো ধনকুবের। পছন্দের প্রার্থীর জন্য প্রচারণায় নেমেছেন তারকারাও। সর্বশেষ জরিপগুলোর তথ্যমতে, দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে।
তবে দেশটির কিছু অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট প্রদান শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির ভোট ব্যাংক রয়েছে। মূলত কিছু দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য প্রার্থীদের জয়-পরাজয় ঠিক করে দেয়। যেগুলো ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবেও পরিচিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাধারণত দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাডিড লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যায়। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নির্ধারক হিসেবে কাজ করে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। কেবল জনগণের সরাসরি ভোট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে না। আর এ কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ‘সুইং স্টেট’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে নির্ধারিত ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীর কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ রাজ্যগুলো ধারাবাহিকভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়, তাই অল্প সংখ্যক সুইং স্টেট তীব্র লড়াইয়ের ক্ষেত্রে জয়-পরাজয় নির্ধারকের ভূমিকায় চলে আসে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে তাই নিজেদের শক্ত ঘাঁটির পরিবর্তে সেই রাজ্যগুলোর ভোটারদের মন জয়ের আশায় প্রচণ্ড পরিশ্রম করার পাশাপাশি বিপুল অর্থ বিনিয়োগের প্রবণতা দেখা যায়।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেডফিল্ড অ্যান্ড ইউলটন স্ট্র্যাটেজির জরিপে ৯টি অঙ্গরাজ্যকে সুইং স্টেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্যগুলো হলো–অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন।
তবে সংবাদমাধ্যমে ৭টি রাজ্যকে সুইং স্টেট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। সেগুলো হলো–পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, মিশিগান, অ্যারিজোনা ও নেভাদা। এই ৭ রাজ্যে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৯৩টি। অর্থাৎ ২৭০–এর ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে হলে উভয় প্রার্থীকে এই ৭ রাজ্যের বেশ কয়েকটিতে জয় নিশ্চিত করতে হবে। এর সাথে ফ্লোরিডা ও মিনেসোটাও এ তালিকায় যুক্ত হলে সুইং স্টেটের মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩৩–এ। যদিও এ দুই রাজ্যের মধ্যে মিনেসোটা ডেমোক্রেটিট এবং ফ্লোরিডা রিপাবলিকান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বড় কোনো দুর্ঘটনা না হলে এ পরিচয় থেকে রাজ্য দুটি এবারও বের হবে না বলেই মনে করছেন অধিকাংশ বিশ্লেষক।
সুইং স্টেটের প্রধান বৈশিষ্ট হলো- এর অস্পষ্ট রাজনৈতিক ঝোঁক। এসব রাজ্যের ভোটার গত নির্বাচনে যে প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিল, এবার তাকেই ভোট দেবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এ কারণেরই সুইং স্টেট বদলেও যেতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফ্লোরিডার কথা। ১৯৯০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই রাজ্যটিকে সুইং স্টেট হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন এটিকে আর তা বলা হচ্ছে না। কেননা, এখানে এখন রিপাবলিকান দলের ভোটারদের রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা অনেক বেশি।
অ্যারিজোনায় নির্বাচনি জরিপে দেখা যাচ্ছে, দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীই প্রায় সমান অবস্থায় রয়েছেন। অথবা বলা যেতে পারে, ট্রাম্প মাত্র এক পয়েন্ট এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিসের চেয়ে। অন্যদিকে পেনসিলভানিয়াতেও রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উষ্ণ আভাস। এখানে কমলা হ্যারিস তার প্রতিদ্বন্দ্বি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এক শতাংশ ভোটারের মন জয় করে এগিয়ে আছেন।
মিনেসোটায় কমলা হ্যারিস বেশ খানিকটা এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে। এখানে ট্রাম্পের চেয়ে পাঁচ থেকে আট পয়েন্ট এগিয়ে আছেন কমলা। তবে ভোটারদের মনমানসিকতা কখন পরিবর্তন হয় তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। এসব গড় পয়েন্ট ব্যবধান নির্দেশনা দিচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে।
