শেষ ওভারে দরকার ছিল ১০ রান, প্রতিপক্ষ বোলার হারিস রউফ। একপাশে ছিলেন তিলক বর্মা, অন্যপাশে রিংকু সিং। ঠিক এখান থেকেই শুরু হলো নাটকীয়তা।
প্রথম বলে ২ রান, দ্বিতীয় বলে তিলকের ছক্কা—ভারতের জয় তখন কেবল সময়ের ব্যাপার। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল, আর চতুর্থ বলেই রিংকুর দারুণ এক চার। ম্যাচ শেষ, ভারত জয়ী ৫ উইকেটে!
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত নবমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলল-সাতবার ওয়ানডে সংস্করণে, দুবার টি-টোয়েন্টিতে।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোববার অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের সপ্তদশ আসরের ফাইনালটি যেন ছিল দুই দলের মেজাজেরও ফয়সালা। একদিকে ভারত, যারা আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর; অন্যদিকে পাকিস্তান, যারা জয়ের জন্য মরিয়া হলেও বারবার হোঁচট খাচ্ছে সেই পুরনো ব্যর্থতার কাছে। ফল, পুরনো চিত্রনাট্যই আবার দেখা গেল-জয় ভারতের, হতাশা পাকিস্তানের।
প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েও জয় তুলে নিতে পারল না সালমান আলি আগার নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান। শেষ ওভারে গড়ানো এক জমজমাট ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ভারত নবমবারের মতো এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য পাকিস্তানের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। ১১.২ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ওঠে ১০০ রান। মনে হচ্ছিল, বড় লক্ষ্যই হয়তো দাঁড় করাতে যাচ্ছে তারা। কিন্তু এরপরই যেন ছন্দপতন। একে একে ফিরতে থাকেন সেট ব্যাটাররা, আর চাপ নিতে না পেরে ১৪৬ রানেই গুটিয়ে যায় পুরো ইনিংস। ভারতের বোলারদের কৌশল আর টাইট লাইনে আটকে পড়ে পাকিস্তান।
১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও ভারতীয় ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেও সুখকর ছিল না। ফাহিম আশরাফ ও শাহিন আফ্রিদির আগুন ঝরানো বোলিংয়ে মাত্র ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। আউট হন অভিষেক শর্মা, সূর্যকুমার যাদব এবং শুভমান গিল। সূর্যকুমার তার দীর্ঘ অফফর্ম কাটাতে পারেননি এবারের ফাইনালেও; ফাইনালসহ পুরো বছরে ১১ ম্যাচে তার রান মাত্র ১০০।
এই বিপদের মাঝেই উঠে দাঁড়ান তিলক ভার্মা। শুরুতে সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে গড়েন মূল্যবান জুটি। যদিও স্যামসন ব্যক্তিগত ২৪ রানে ফিরে যান, তবে এর মধ্যেই পাকিস্তান একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলে দেয়, তালাতের সেই ভুল ক্যাচ মিসই হয়ে যায় ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট।
শেষদিকে তিলকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শিবম দুবে। দুজনের ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপে ধীরে ধীরে ভারতের ইনিংস ঘুরে দাঁড়ায়। একসময় প্রয়োজনীয় রানরেট বাড়তে শুরু করলেও, ১৫তম ওভারে রউফকে এক ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আবার নিজেদের করে নেন তিলক।
শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১০ রান। গ্যালারি নিস্তব্ধ, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে টিভির পর্দায়। কিন্তু তিলক সেই উত্তেজনাকে প্রশান্তিতে রূপ দেন। ঠাণ্ডা মাথায় চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
এই জয়ে আরও একটি কীর্তি গড়েছে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা অষ্টম জয়। শেষবার পাকিস্তান ভারতকে হারিয়েছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর আর পারেনি তারা, পারল না এবারও, ফাইনালের মতো মঞ্চে এসে।
পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি হতে পারত ইতিহাস গড়ার উপলক্ষ। কিন্তু বারবারই তারা গড়তে গিয়েই ভেঙে পড়ে। অন্যদিকে, ভারত আবারও প্রমাণ করল, কেন তারা এই অঞ্চলের ক্রিকেটে শীর্ষ শক্তি!
