ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

লেক হিলিয়ার

অস্ট্রেলিয়ার গোলাপি হ্রদ ঘিরে রহস্য ও বিস্ময়

আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম

মাদার নেচার মাঝে মাঝে আমাদের চমকে দিতে কখনো ব্যর্থ হয় না। অসাধারণ ও অদ্ভুত কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখায় যা অবাক করার মতো। দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য, ঝর্ণার জলধারা, তুষারাবৃত পাহাড় এবং স্বচ্ছ নীল নদী সাধারণ দৃশ্য। তবে সব সময় এমন কিছু খবর আসে যা সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং নজর কেড়ে নেয়। কানাডার জমে যাওয়া মিথেন বুদবুদ থেকে শুরু করে অ্যান্টার্কটিকার ব্লাড ফলস পর্যন্ত—এই অদ্ভুত প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো নিশ্চিতভাবেই আপনার মুখ খোলা রাখবে বিস্ময়ে এবং আপনার মধ্যে অভিযানীর উন্মাদনা জাগিয়ে তুলবে।

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূলের রিচার্চ দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ মিডল আইল্যান্ডের প্রান্তে অবস্থিত লেক হিলিয়ার। লেকটি তার অদ্ভুত ও চোখধাঁধানো গোলাপি রঙের পানির জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। প্রাকৃতিকভাবে গঠিত এই লবণাক্ত হ্রদটি যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি, যা পর্যটক ও গবেষক দু’পক্ষেরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, হ্রদের গোলাপি রঙের মূল কারণ হল Dunaliella salina নামক একধরনের শৈবাল, যা উচ্চ লবণাক্ত পরিবেশে বিটা-ক্যারোটিন নামের একটি রঞ্জক উৎপাদন করে। এছাড়াও হ্রদের পানিতে রয়েছে Salinibacter ruber, Dechloromonas aromatica এবং কিছু আর্কিয়া প্রজাতির অণুজীব। এইসব অণুজীব মিলেই তৈরি করেছে হ্রদের অদ্ভুত, কিন্তু স্থায়ী গোলাপি রঙ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লেক হিলিয়ারের গোলাপি রঙ কিছুটা ম্লান হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে দায়ী করছেন বৃষ্টিপাতের কারণে লবণাক্ততার হ্রাসকে। তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, রঙের এই পরিবর্তন অস্থায়ী, এবং পানির স্তর স্বাভাবিক হলেই রঙটি পুনরায় ফিরে আসবে।

প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ১৮০২ সালে এই হ্রদের উল্লেখ করেন বিখ্যাত ব্রিটিশ নাবিক ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স। তাঁর অভিযান দলের একজন সদস্য উইলিয়াম হিলিয়ারের নামেই পরবর্তীতে হ্রদের নামকরণ করা হয়। ১৮৮৯ সালে হ্রদ থেকে লবণ উত্তোলনের বাণিজ্যিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

লেক হিলিয়ারে কোনো বড় প্রাণীর দেখা মেলে না। তবে অণুজীবের বিচিত্র উপস্থিতি এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োলজিক্যাল স্টাডি সাইট হিসেবে গড়ে তুলেছে। ২০১৫ সালে Extreme Microbiome Project এর অধীনে এই হ্রদে বিশদ মেটাজেনোমিক গবেষণা পরিচালিত হয়, যেখানে হ্যালোফিলিক (লবণপ্রিয়) জীবের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

লেক হিলিয়ার এখন একটি সংরক্ষিত এলাকা, ফলে সরাসরি সাঁতার কাটা বা হ্রদের পাড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। তবে প্রতিদিন এস্পেরেন্স বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার ও ছোট বিমানে করে পর্যটকরা আকাশপথে হ্রদটি দেখতে পারেন।
এছাড়াও কিছু ক্রুজ ভ্রমণ মিডল আইল্যান্ডের আশেপাশে নিয়ে যায়, তবে হ্রদের কাছাকাছি যাওয়া নিয়ন্ত্রিত।

২০০২ সাল থেকে লেক হিলিয়ারকে ‘উপ-আঞ্চলিক গুরুত্বের জলাভূমি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১২ সালে এটি রিচার্চ দ্বীপপুঞ্জ প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়, যার ফলে হ্রদের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ এখন সরকারের কঠোর তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত।

প্রকৃতি মাঝে মাঝে এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা মানুষের যুক্তি ও কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে যায়। লেক হিলিয়ার ঠিক তেমনই এক বিস্ময়। গোলাপি পানির রহস্য, ইতিহাস, এবং পরিবেশগত গুরুত্ব সব মিলিয়ে এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যের দাবিদারপ্রাকৃতিক রত্ন।

DR/SN
আরও পড়ুন