আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, এর অতিরিক্ত ব্যবহার যে নীরবে মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে, তা অনেকেরই অজানা। সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিনে ১০০ বারের বেশি ফোন আনলক করা মারাত্মকভাবে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং শেখার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কেইমিয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় এই উদ্বেগের বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, কোনো ব্যক্তি যদি দিনে ১০০ বারের বেশি ফোন আনলক করেন, তবে তার মধ্যে মনোযোগ হ্রাস, স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা এবং নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা কমার মতো সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। আর এই সংখ্যাটি যখন ১৫০ এর কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন সমস্যাগুলো আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোনের প্রতি এই প্রবণতা এখন প্রায় আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনা লেম্বকি এই অভ্যাসকে আসক্তির আচরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নোটিফিকেশনের সামান্য শব্দ বা আলো আমাদের মস্তিষ্কে একটি ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এর ফলেই আমরা অজান্তেই বারবার ফোন হাতে তুলে নিই। ফোন পাশে না থাকলেও ব্যবহারকারীদের মধ্যে কিছু মিস হয়ে যাচ্ছে এমন একটি অনুভূতি কাজ করে। এর ফলস্বরূপ, মনোযোগ মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং চিন্তা করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বই পড়া বা গভীর চিন্তামূলক কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। কিন্তু ফোনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা স্মৃতি এবং যুক্তি-বুদ্ধি দুটোকেই দুর্বল করে দিচ্ছে। অনলাইন ক্লাস, কাজ এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে ফোনের ব্যবহার বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ায়, এখন ক্লাসে বা কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে স্বস্তির খবর হলো, এই ক্ষতিকর অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহ কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে-
- সময় নির্দিষ্ট করুন: কাজ করা, পড়াশোনা করা, ঘুমানো বা খাবার খাওয়ার সময় ফোনটিকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখুন।
- ফোনবিহীন সময়: দিনে কিছু নির্দিষ্ট সময়কে ফোন-মুক্ত সময় হিসেবে চিহ্নিত করুন।
এই সহজ অভ্যাসগুলো ফিরিয়ে আনতে পারে আপনার মনোযোগ, আর আপনার মস্তিষ্কও হয়ে উঠবে আরও সক্রিয় ও সতেজ।
পোষা প্রাণীদের জন্য স্মার্টফোন ‘পেটফোন’!