কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বিকাশে ওপেনএআই এবার আরও এক বড় রকমের পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছে। সংস্থাটি আবুধাবিতে বিশাল এক ডেটা সেন্টার ক্যাম্পাস নির্মাণে অংশ নিচ্ছে। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এ প্রকল্প আকারে পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র মোনাকোর চেয়েও বড় হবে এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে পাঁচটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান।
প্রকল্পটি প্রায় ১০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হবে এবং এটিকে সম্ভাব্যভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এআই অবকাঠামোগুলোর একটি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ডেটা সেন্টারটির প্রধান ব্যবহারকারী ওপেনএআই-ই হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এ প্রকল্প বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উদ্যোগটি ওপেনএআই, সফটব্যাংক ও ওরাকলের অংশীদারত্বে ঘোষিত ‘স্টারগেট’ প্রকল্পের অংশ। জানুয়ারিতে ঘোষিত এই বৈশ্বিক প্রকল্পের আওতায় বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী কম্পিউটার চিপসজ্জিত বৃহৎ ডেটা সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যাবিলিনে ইতিমধ্যে ওপেনএআইয়ের প্রথম স্টারগেট ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ চলছে, যার ক্ষমতা হবে ১ দশমিক ২ গিগাওয়াট। তবে আবুধাবির প্রকল্পটি তারচেয়েও চারগুণের বেশি বড় হবে।
উল্লেখ্য, ওপেনএআই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক সম্পর্ক নতুন নয়। ২০২৩ সালে ওপেনএআই ও আবুধাবিভিত্তিক ‘টেক কনগ্লোমারেট জি৪২’-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রসারে একসঙ্গে কাজ শুরু করে।
সে বছরই আবুধাবিতে এক আলোচনায় ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান বলেছিলেন, এআই নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) অনেক আগেই কথা বলতে শুরু করেছে, যখন এটি এখনকার মতো জনপ্রিয় ছিল না।
তবে এই সম্পর্ককে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জি৪২-এর চেয়ারম্যান হলেন শেখ তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, যিনি আমিরাতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দেশটির শাসকের ছোট ভাই।
এ ছাড়া জি৪২-এর সঙ্গে চীনের হুয়াওয়ে ও বেইজিং জিনোমিকস ইনস্টিটিউটের মতো কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চীনা গোয়েন্দা তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার কথাও উঠে আসে।
চাপের মুখে ২০২৪ সালের শুরুতে জি৪২-এর সিইও ব্লুমবার্গকে জানান, ‘আমাদের পূর্ববর্তী সব চীনসংক্রান্ত বিনিয়োগ আমরা ইতিমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছি। ফলে আমাদের আর চীনে কোনো বাহ্যিক উপস্থিতির প্রয়োজন নেই।’
এর পরপরই জি৪২-এ ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয় ওপেনএআইয়ের বড় অংশীদার মাইক্রোসফট। মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ জি৪২-এর পরিচালনা পর্ষদেও যোগ দেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ প্রকল্প শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে নয়, বরং বৈশ্বিক কূটনৈতিক ও প্রযুক্তি দখলের নতুন অধ্যায় তৈরি করতে যাচ্ছে।
