ভেঙে পড়েছিলো দেশের অর্থনীতি। দিন দিন বেড়েই চলছিলো ঋণ পরিশোধের মাত্রা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার বৈদেশিক ঋণের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছিলো না। কিন্তু ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের পর দুই মাসের মাথায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সক্ষমতার পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দেখা যাচ্ছে আশার আলো।
গত দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। রিজার্ভে হাত না দিয়ে মাত্র দুই মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংক দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে বলে জানান তিনি। এর ফলে অনিশ্চয়তা কাটতে শুরু করেছে পণ্য আমদানিতে।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশে যত বিদেশি ঋণ এসেছে, পরিশোধ করতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এই প্রান্তিকের প্রতি মাসেই ঋণ ছাড়ের চেয়ে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ ছিল বেশি।
রোববার (২০ অক্টোবর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে এই সময়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ঋণ ছাড় করানো সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ এই তিন মাসে ঋণ ছাড়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ প্রায় ২৮ কোটি ডলার ছিল।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ছাড় যেমন কমেছে, তেমনি ঋণ শোধও বেড়েছে। গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম প্রান্তিকে ১২৮ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ এসেছিল, যা এবারের চেয়ে ৪২ কোটি ডলার বেশি। অন্যদিকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এবার ২৫ কোটি ডলার ঋণ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে কয়েক শ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অর্থ ছাড় যেমন কমেছে, আবার ঋণ পরিশোধও বেড়েছে। ফলে ঋণ প্রাপ্তি ও পরিশোধের ভারসাম্য নেতিবাচক। কম অর্থ আসছে, বেশি অর্থ শোধ করতে হয়েছে।
এদিকে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি প্রায় তলানিতে নেমেছে। ওই তিন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের ঋণের প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ছাড় করা মোট অর্থের মধ্যে অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। অন্যদিকে একই সময়ে ঋণের আসল হিসেবে ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং সুদ বাবদ ৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে।
ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ২.৫ বিলিয়নের মতো অনাদায়ী, অনিষ্পন্ন দায় ছিল সরকারের। আর সেটা ছিল ডলারের। আমরা তা কমিয়ে ৭০০ মিলিয়নে নিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, সার ও বিদ্যুতের জন্য টাকা দেওয়াসহ সবার ঋণ কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে ঋণ জিরোতে নামিয়ে আনা। এর মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যেমন চাপ কমবে, তেমনি গতি বৃদ্ধি পাবে সার্বিক কর্মকাণ্ডেও।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং স্থিতিশীল হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আগের সরকারের আমলে রিজার্ভ প্রতি মাসে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১৩০ কোটি) ডলার করে কমে আসছিল, তবে এখন তা একটি ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরছে।
