ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

এসএমই খাতকে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম

এসএমই খাতকে জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি পর পর চারটি বৈঠক করেছে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি। সভাগুলোতে এসএমই খাতকে জাতীয় অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। 

এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিগণ।

শনিবার (১ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। 

ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত সিদ্ধান্তসমূহ:
১. বৈদেশিক অর্ডার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ১০% বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম নীতিমালা থেকে অপসারণের উদ্যোগ।

২. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম ৩,০০০ মার্কিন ডলারের পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দের বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রেরণ।

গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:
১. নতুন ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্ট ডিজাইন: এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট (এসএমইএসপিডি) যৌথভাবে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করে এসএমই খাতের জন্য চলতি মূলধন বা এসএমই-বান্ধব প্রোডাক্ট ডিজাইনের উদ্যোগ নেবে।

২. নীতিমালার কার্যকারিতা মূল্যায়ন: এসএমইএসপিডির জারি করা এসএমই মাস্টার সার্কুলারের পারফর্ম্যান্স ইভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা যাচাই করা হবে।

৩. ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ঋণ প্রদানের সম্ভাব্যতা: ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান সম্ভব কিনা তা যাচাইয়ে এসএমইএসপিডি একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে।

৪. সুদের হার পুনর্বিবেচনা: ব্যাংক রিফাইন্যান্সিং স্কিমকে আকর্ষণীয় করতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার সমন্বয় করা যায় কিনা, সেই বিষয়ে এসএমইএসপিডি মতামত প্রদান করবে।

এর আগে ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এসএমই খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ- যেমন: Payment, Customs, License, Loan ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

পরে, সেই আলোচনার ধারাবাহিকতায় ২১ সেপ্টেম্বর এসএমই ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তাব শোনা হয়। প্রস্তাবগুলোর ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি নির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ৮ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এসএমই উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনলাইনে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তসমূহ:
১. স্যাম্পল ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে এনবিআরের মনিটরিং জোরদার।

২. ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে অর্থপ্রাপ্তিতে উদ্যোক্তাদের আইসিটি খাতের মতো সুবিধা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ।

৩. অনলাইন বিক্রির অর্থ দ্রুত উদ্যোক্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা নিশ্চিত করতে SSL Commerce ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা।

৪. অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে রফতানিতে বিদ্যমান নীতিমালায় B2B ও B2C মডেল অন্তর্ভুক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ।

৫. এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রচারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ।

৬. উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিশেষ Foreign Currency/Endorsement Card চালুর প্রস্তাব।

৭. আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ক্লায়েন্টদের উদ্দেশ্যে এসএমই খাত বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের উদ্যোগ।

৮. রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে Standard Operating Procedure (SOP) বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের সমন্বয়।

৯. এগ্রো-অর্গানিক সার্টিফিকেট ইস্যু সমস্যার সমাধানে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিডার মধ্যে আলোচনা।

১০. ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই আগাম পেমেন্টের সীমা ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ মার্কিন ডলার এবং ইআরকিউ (ERQ) অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধের সীমা ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ। (সূত্র: FE Circular No. 35, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

১১. স্থানীয় বীমা কোম্পানির কভারেজসহ ওপেন অ্যাকাউন্টে রফতানি লেনদেনের অনুমোদন। (সূত্র: FE Circular No. 39, ৫ অক্টোবর ২০২৫)

১২. ব্যবসায়ীদের ট্রেড পেমেন্ট পদ্ধতি সহজভাবে উপস্থাপন করতে একটি ফ্লোচার্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের উদ্যোগ।

এ ছাড়া, ২৮ আগস্টের বৈঠকে এনবিআর HS Code সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এখন থেকে ৮ ডিজিটের মধ্যে প্রথম ৪ ডিজিট মিলে গেলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কায়ন সম্পন্ন করবে।

এই প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘সংস্কারের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিতে গতিশীলতা বৃদ্ধি করা। সম্মিলিতভাবে, এসএমই খাত আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল অবদানকারী; যদিও তাদের কণ্ঠ কিছু বড় ব্যবসার মতো জোরালোভাবে শোনা যায় না। আমাদের অবশ্যই এসএমই উদ্যোক্তাদের গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে হবে এবং তাদের ব্যবসা প্রতিটি পর্যায়ে সহজতর করতে হবে। অর্থায়ন থেকে পেমেন্ট এবং লজিস্টিকস পর্যন্ত। সরকারকে এর সহায়ক হতে হবে, বাধা নয়।’

FJ
আরও পড়ুন