বর্ষা শুরু হয়েছে। কিছু ভ্রমণের জায়গাগুলো বর্ষায় ধারণ করে নতুন এক রূপ। ঢাকার বর্ষার রয়েছে নিজস্ব আমেজ। যদি ভাবেন শহর থেকে একটু বাইরে বের হবেন, তবে মিলতে পারে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের দেখা।
বিছনাকান্দি
মেঘালয়ের সেভেন সিস্টার্স থেকে আসা পানির ধারা প্রকৃতিতে অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে বিছনাকান্দিতে৷ ২ পাশে পাথুরে পথ এক অপার্থিব আবহ এনে দেয়। সিলেটের অন্যান্য ভ্রমণ-গন্তব্যের মতো বিছনাকান্দিও বর্ষাকালে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে৷ মোহনীয় ঝর্ণার সঙ্গে চমৎকার পানির প্রবাহ শুধু সারাজীবন মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতাই দেবে না, ইন্সটাগ্রামের জন্য অসাধারণ কিছু ছবিও দেবে।

জলপ্রপাত
বর্ষায় প্রতিটি জলপ্রপাত প্রাণ ফিরে পায়, বিপুল জলপতনের আনন্দে হয়ে ওঠে উচ্ছল। এই বর্ষায় কোনো জলপ্রপাত দর্শনের পরিকল্পনা আপনিও করতে পারেন। শীতল হতে যেতে পারেন পাহাড়ের মাথা থেকে গড়িয়ে পড়া জলধারার নিচে।
বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারে আছে ছোট-বড় অনেক জলপ্রপাত। নাফাখুম, ধুপপানি, জাদিপাই, হামহাম—বাহারি নামের মতো রূপেও জলপ্রপাতগুলো অনন্য। গহিন পাহাড়ের এই জলপ্রপাতগুলো দেখতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পিছপা হচ্ছেন না রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা।

টাঙ্গুয়ার হাওর
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অনেক নদী, খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জলের ওপর মাথা তুলে ভেসে থাকে শুধু হিজল-করচগাছ। তখন দেখা যায় পাখির ওড়াউড়ি, অনতিদূরে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়। হাওর ও মেঘ-পাহাড়ের এমন রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর বর্ষায় হাজারো পর্যটক ঘুরতে যান টাঙ্গুয়া। এবার বর্ষার ভ্রমণ পরিকল্পনায় আপনিও রাখতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর।
শ্রীমঙ্গল
প্রকৃতির সান্নিধ্যে বর্ষা-যাপনের অন্যতম গন্তব্য হতে পারে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত। বর্ষায় এই চা–বাগানগুলো হয়ে ওঠে সবুজ গালিচা। চা-বাগানের আশপাশে আবাসনের ব্যবস্থা করে কাটিয়ে দিতে পারেন দিন-দুই। এখানে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট যেমন আছে, তেমনি মোটামুটি বাজেটে পাবেন ইকো-রিসোর্টের আবাসন সুবিধাও।
ভাসমান পেয়ারা বাজার
পেয়ারাবাগান আর ভাসমান হাটের কারণেই পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির ভীমরুলি আর পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা। বর্ষায় এক দিনের ভ্রমণে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।
সাজেক
বর্ষায় পাহাড়ি প্রকৃতি সবুজ হয়ে ওঠে। পাহাড়ের সবুজে ডানা মেলে সাদা-কালো মেঘ। সবুজের বেষ্টনীতে কেবলই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা! ভোরে বৃষ্টি হলে মেঘ ঢুকে পড়ে শোবার ঘর পর্যন্ত। সাজেকের মেঘ কখনো ধরা দেয় সমুদ্রের রূপে। সবুজ উপত্যকা, অপার্থিব সূর্যোদয়, জোছনায় ছড়িয়ে পড়া মেঘের দল, আকাশের মেঘের অনেক রং মিলিয়ে সাজেক যেন অন্য এক জনপদ। এক জাদুকরি প্রকৃতির রহস্যঘেরা উপত্যকা। সারা দেশে পর্যটকদের পছন্দের নামও সাজেক। পাহাড়ি এই উপত্যকা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায়। যাতায়াত করতে হয় খাগড়াছড়ি শহর হয়ে। বর্ষায় সাজেকের শোভা দেখার পরিকল্পনা আঁটতেই পারেন।

চলনবিল
ভরা বর্ষায় চলনবিল হয়ে ওঠে জল-থইথই। চলনবিল শুধু একটি বিল নয়, অনেক বিল, খাল ও নদী নিয়ে গড়ে ওঠা জলাভূমি। বিলটি বিস্তৃত নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ৬০০টি গ্রাম নিয়ে। বর্ষার অবারিত জলে নৌকায় ভাসতে চলনবিল রাখতে পারেন ভ্রমণতালিকায়।
