উন্নত জীবনমান, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনা, চাকরি বা স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর অনেকেই নরওয়ে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেকে ঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন না। ফলে আবেদন করেও ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক তথ্য, প্রস্তুতি ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সহায়তা নিলে নরওয়ের ভিসা পাওয়া কঠিন কিছু নয়।
বর্তমানে নরওয়েতে প্রবেশের জন্য কয়েকটি ভিসা ক্যাটাগরি চালু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো শর্ট-টার্ম ভিসা বা সি ভিসা, যা মূলত পর্যটন, ব্যবসা বা স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণের জন্য দেওয়া হয়। এর মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন। অন্যদিকে, কাজ, উচ্চশিক্ষা বা দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের জন্য প্রয়োজন হয় রেসিডেন্স পারমিট বা লং-টার্ম ভিসা, যাকে ডি ভিসাও বলা হয়।
ভিসা পেতে হলে প্রথমেই আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে, যার মেয়াদ অন্তত ছয় মাস। সঙ্গে দিতে হবে সদ্য তোলা দুই কপি ছবি, নির্ধারিত আবেদন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে অনলাইনে। অবশ্যই প্রয়োজন হবে ট্রাভেল মেডিকেল ইনস্যুরেন্স, যার কাভারেজ কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরো। পাশাপাশি আবেদনকারীর আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দিতে হয়। যারা চাকরিজীবী, তাদের নিয়োগপত্র এবং ছুটির অনুমতির প্রমাণ দিতে হবে। ব্যবসায়ী হলে প্রয়োজন হবে ট্রেড লাইসেন্স ও আয়কর সংক্রান্ত কাগজপত্র। এছাড়া ভ্রমণের উদ্দেশ্য নির্ভর করে হোটেল বুকিং, ফ্লাইট বুকিং কিংবা ইনভাইটেশন লেটারও প্রয়োজন হতে পারে।
ভিসা আবেদন করতে হয় নরওয়ের ইমিগ্রেশন বিভাগের (UDI) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ ও ফি পরিশোধ করার পর, ঢাকায় অবস্থিত ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দিতে হয়। সাধারণত শর্ট-টার্ম ভিসার সিদ্ধান্ত আসে ১৫ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে, তবে রেসিডেন্স পারমিট বা স্টুডেন্ট ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে সময় লাগে আরও বেশি।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই নরওয়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার থাকতে হবে। পাশাপাশি এক বছরের খরচ চালানোর সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হয়, যার পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ইউরো। এছাড়া ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ (IELTS বা TOEFL) ও আবাসনের ব্যবস্থা সংক্রান্ত কাগজপত্রও জমা দিতে হয়।

অন্যদিকে, চাকরির জন্য নরওয়ে যেতে চাইলে সেখানকার কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরির অফার লেটার লাগবে। পাশাপাশি চাকরির বিবরণ, বেতন কাঠামো, অভিজ্ঞতা সনদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। কেউ কেউ এল-১, ই-২ বা গ্রিন কার্ড জাতীয় রেসিডেন্সি রুটেও আবেদন করতে পারেন। এ ছাড়া, যারা বৈধভাবে নরওয়েতে বসবাসরত রয়েছেন, তাদের স্বামী বা স্ত্রীও কাজের অনুমতি পেতে পারেন।
তবে অভিজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ধরনের ভিসা আবেদনে তথ্য গোপন করা, জাল কাগজপত্র দেওয়া বা ভুল তথ্য দেওয়া মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমনকি একবার ভিসা প্রত্যাখ্যাত হলে ভবিষ্যতে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও যেতে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সব মিলিয়ে, নরওয়ের ভিসা পেতে হলে দরকার সময়মতো সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত করা, নির্ভুল আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং প্রয়োজন হলে অভিজ্ঞ অভিবাসন পরামর্শকের সহায়তা নেওয়া। সঠিক পথে এগোলে, ইউরোপে নিজের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা একদমই অসম্ভব নয়।
পর্যটন-বান্ধব নরওয়ে হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ হোটেল স্যুট