বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য “বিঘ্ন অতিক্রম করে এইডস মোকাবিলা” (Overcoming disruption, transforming the AIDS response)। আন্তর্জাতিক দাতাদের তহবিল হ্রাসের কারণে এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রমে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা তুলে ধরার পাশাপাশি অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে দেশ ও কমিউনিটিগুলোর সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৫ সালে একটি ঐতিহাসিক অর্থায়ন সংকট বিগত কয়েক দশকের অগ্রগতিকে নস্যাৎ করার হুমকি সৃষ্টি করেছে। HIV প্রতিরোধমূলক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য অপরিহার্য কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন সেবাগুলোকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সমকামী সম্পর্ক, জেন্ডার আইডেন্টিটি ও মাদক ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক আইন সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে, যা HIV সেবা প্রাপ্তিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈশ্বিক এইডস কার্যক্রম বিপর্যস্ত হলেও ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি (SDG) লক্ষ্য অর্জনে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এইডস এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঝুঁকি প্রশমন ও লক্ষ্য অর্জনে নতুন ও রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা অপরিহার্য।
দেশগুলোকে HIV প্রোগ্রামিং ও অর্থায়নে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। বৈশ্বিক এইডস প্রতিক্রিয়া কেবল অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর নির্ভর করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে, অর্থায়নের ঘাটতি পূরণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার শূন্যস্থান পূরণ, আইনি ও সামাজিক বাধা দূরীকরণ এবং কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য, যা কাঠামোগত বৈষম্য দূরীকরণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে সহায়ক হবে। HIV সেবার সহজলভ্যতা বৃদ্ধি, সমাজ থেকে কুসংস্কার ও বৈষম্য দূরীকরণ, এবং নারী, কিশোরী ও LGBTQ+ জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা রূপান্তরমূলক সমাধানের অংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে রোগী শনাক্তের দিক থেকে ঢাকার পরে রয়েছে রাজশাহী, এরপর চট্টগ্রাম। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে অস্বাভাবিক হারে রোগী শনাক্ত হয়েছে; গত এক বছরে ১৪৪ জন রোগী পাওয়া গেছে, যাদের ৯৮% সুঁই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকাসক্ত।
দেশে বর্তমানে অনুমিত রোগীর সংখ্যা ১৪,৬০০। ১৯৮৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯,৭০৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১,৮২০। বর্তমানে প্রাদুর্ভাবের হার ০.০১% এর কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এইচআইভি-সহ বেঁচে ছিলেন। একই বছরে ১৩ লাখ নতুন সংক্রমণ এবং প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এইডস-সংক্রান্ত জটিলতায় মারা গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৩২% বয়স ১৫-২৪ বছরের, যার ২০% নারী এবং ৬১% সাবসাহারা আফ্রিকান অঞ্চলে বসবাস। বিশেষ করে শিশু, কিশোর-কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ইনজেকশন ভিত্তিক অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ এবং নতুন গবেষণার মডেল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ কমাতে সহায়ক। তবে অর্থসংকট ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চাপ অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বিশ্ব এইডস দিবস ২০২৫ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা অনেক সাফল্য অর্জন করেছি, তবে সমান স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে এবং বৈষম্য দূর না হলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এইডস মোকাবিলা শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি মানবিক অধিকার, ন্যায় ও সমতার বিষয়। আমরা প্রার্থনা করি—একসঙ্গে কাজ করলে একদিন একটি এইডস-মুক্ত পৃথিবী গড়া সম্ভব।
যশোরে বাড়ছে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা, বেশির ভাগই শিক্ষার্থী
সিরাজগঞ্জে বাড়ছে এইডস রোগী, চলতি বছরে ২৬ মৃত্যু