ইরান এখন এমন সামরিক সক্ষমতা অর্জন করেছে, যা দিয়ে তারা দুই বছর ধরে প্রতিদিন ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে-এমন দাবি করেছেন ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর একজন ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা।
সোমবার (৭ জুলাই) ইরানের আধা-সরকারি মেহের নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতির অবস্থানে রয়েছে। আমাদের গুদাম, ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং স্ট্র্যাটেজিক সুবিধাগুলো এতটাই ব্যাপক যে এখনো পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রকৃত সামরিক ক্ষমতার সামান্য অংশই প্রকাশ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যদি ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলেও আমরা টানা দুই বছর ধরে প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারব, তবুও আমাদের অস্ত্রভাণ্ডার ফুরাবে না।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়ে সরাসরি আগ্রাসন শুরু করে। এর জবাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা প্রতিশোধ নেয় তেহরান। এরপর নয় দিনব্যাপী চলতে থাকে টানা পাল্টা হামলা।
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ভারী বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে। পরদিন ইরান পাল্টা জবাব হিসেবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি ‘আল উদেইদ’-এ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, এই হামলায় কোনো হতাহত কিংবা উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলও জানায়, তারা মার্কিন মধ্যস্থতার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং তাদের সামরিক অভিযান শেষে নিজের লক্ষ্য পূরণ করেছে।
তেহরান পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়, তারা তেল আবিবকে হামলা বন্ধে বাধ্য করে কার্যত বিজয় অর্জন করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সামরিক কর্মকর্তাদের এই ধরনের বক্তব্য কেবল ইসরায়েল নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন একাধিক যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা থামছে না, তখন আইআরজিসি উপদেষ্টার মুখে দীর্ঘমেয়াদি হামলা চালানোর সক্ষমতার ঘোষণা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে।
এটি স্পষ্ট, ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ইরান এখন কেবল প্রতিরোধ নয়, দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশোধের প্রস্তুতি রেখেই এগোচ্ছে।
