ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি অনেকটাই অস্থিতিশীল। খরচ কমাচ্ছেন মধ্যবিত্ত, কমছে বিক্রিবাটা। খরচ কমাতে নিম্নমানের সাবানের গুঁড়ো, বিস্কুট, চাউমিন, টুথপেস্ট ব্যবহার করছেন মধ্যবিত্তরা। কমিয়েছেন রেস্তোরাঁর খাবার। এ ভাবেই বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে মধ্যবিত্তদের বেহাশ দশা। খবর আনন্দবাজার অনলাইন’র।
অন্তত তিন মাস ধরে প্রতিবেশী দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্রিবাটায় ভাটা। ফলে স্বল্পমেয়াদের ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলো সামলাচ্ছে প্রথম ধাক্কা। যারা মোড়কজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, মধ্যবিত্ত যদি এ ভাবে শিল্পের চাহিদা কমায়, এতে কি দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে?
গত অক্টোবরে খুচরা বাজারের মূল্যবৃদ্ধি আবারও ৬ ভাগ পেরিয়ে ১৪ মাসে সর্বোচ্চ হয়েছে। বেড়েছে সবজির দামসহ প্রায় বিভিন্ন পণ্যের অথচ আয় বাড়েনি বেশির ভাগ মানুষের। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রতিদিনের জীবনযাপন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার খরচ ঊর্ধ্বমুখী। ফলে খরচ কাটছাঁট না করে উপয় নেই।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনাভাইরাসের পরে মূলত ভারতের শহরাঞ্চলের চাহিদায় ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্থিক কর্মকাণ্ড। এখন পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। গ্রাম ও শহরতলিতে বিক্রি কিছুটা বাড়লেও, অবনতি হয়েছে মেট্রোপলিটান শহরে। অথচ, ভোগ্যপণ্য ব্যবসার ৬০-৬৫ ভাগ এই অঞ্চল নির্ভর। অর্থ মন্ত্রণালয় ও রিজার্ভ ব্যাংক চলতি অর্থবছরে ৭.২ ভাগ জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। কিন্তু চাহিদা না বাড়লে তা কী করে সম্ভব, এমন উঠছে প্রশ্ন। বিশেষত, গত এপ্রিল-জুনে যেহেতু জিডিপি বৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ হওয়ায় সংশয় রয়েছে জুলাই-সেপ্টেম্বর নিয়েও।
সম্প্রতি সিটি ব্যাংক সমীক্ষা বলছে, শহরে চাহিদা এখন দু’বছরের তলানিতে। কমেছে বিমানের টিকিট বুকিং, জ্বালানি বিক্রি, মজুরি। নথিভুক্ত সংস্থাগুলিতে মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে বেতন বৃদ্ধির হার মাত্র ২ ভাগ। গত ১০ বছরে যার গড় ছিল ৪.৪ ভাগ। ফলে কমেছে পারিবারিক সঞ্চয়।
সংস্থার ভারতীয় শাখার মুখ্য অর্থনীতিবিদ সমীরণ চক্রবর্তী বলেন, কিছু সূচকের পতন সাময়িক। কিন্তু সামগ্রিক ইঙ্গিত ভাল নয়। এ বছর বিভিন্ন উৎসবের মৌসুমে বিক্রি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। গত বছর এর দ্বিগুণ ছিল।
ভোগ্যপণ্য বিক্রেতা নেসলে ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সুরেশ নারায়ণন আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আগে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ছিল। সেখানে ব্যবসা করতাম। কিন্তু সেই অংশটাই সম্ভবত সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালের পরে গত এপ্রিল-জুনেই প্রথম বার বিক্রি কমেছে নেসলের।’
অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না এলে উন্নতি অসম্ভব। সরকার অবশ্য দামে লাগাম টানতে ফের খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির আশ্বাস দিয়েছে।
মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপির দাবি, জোগানে উন্নতি হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি আবারও রিজার্ভ ব্যাংকের লক্ষ্যে (৪%) নামানো সম্ভব।
ব্যাংক অব আমেরিকার ভারত ও আসিয়ান শাখার আর্থিক গবেষণা প্রধান রাহুল বাজোরিয়া বলছেন, সরকারি খরচ বাড়লে বেসরকারি ক্ষেত্রেও বিক্রি বাড়তে বাধ্য। তাতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ হতে পারে। তবে এত হিসাব একসঙ্গে মেলানো যাবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
