টাঙ্গাইলে বিএনপির কার্যালয়ে প্রথম সারির চেয়ারে বসে টেবিলে পা তুলে সিগারেট খাচ্ছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় পর থেকে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে। ভাইরাল হওয়া ছবির আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম হারুণ আর রশিদ। তিনি ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী। জুলাইবিপ্লব সংঘটিত না হলে তিনিই হতেন সভাপতি।
জানা গেছে, হারুন আর রশিদের বাড়ি সিংহচালা গ্রামে। তার বাবা একাব্বর আলী ছিলেন বৃহত্তর রসুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে লক্ষিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জুলাইবিপ্লবের পর হারুন বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরত আসেন। পালাতে পারেননি। প্রায় একমাস গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে আসেন হারুন। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। এতে হারুন পৌঁছে যায় বিএনপির পার্টি অফিস পর্যন্ত। ওই অফিসে দিন-রাত আড্ডায় মশগুল থাকেন হারুন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য ও লক্ষিন্দর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী আকন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার দোষ কম। আমাদের নেতৃত্বে যারা আছেন, যারা এই অফিস পরিচালনা করেন অর্থাৎ সিনিয়ররা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অফিসে বসেন। বিএনপির সিনিয়ররা আওয়ামী লীগ ছাড়া চলতে পারেন না। আমি একা এ কাজে বাঁধা দিয়ে কিছু করতে পারি না। জুলাইবিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিল হারুন। কিন্তু আমাদের কিছু লোক অভয় দিয়ে তাকে এলাকায় রেখে দিয়েছে। মনে হয়, অফিসটা আমাদের না আওয়ামী লীগের অফিস। এটা লজ্জাজনক বিষয়। কী করবো বুঝতে পারছি না।
‘জিয়ার সৈনিক’ নামে এক ফেসবুক আইডি থেকে হারুন অর রশিদের টেবিলে পা তোলা ও হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে ‘বাহ্! আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি কুখ্যাত ভূমি দস্যু একাব্বর চেয়ারম্যানের ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ী হারুন ভাই বলে কথা। বিএনপির পার্টি অফিসে হাতে সিগারেট আর টেবিলে পা তুলে বসে থাকা সাধারণ জনগণকে মোটেও অবাক করেনি। কারণ এই এলাকায় স্বজনপ্রীতির খেলায় বর্তমান রাজনৈতিক হালচাল। কিন্তু প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগের সময় এই স্বজনগুলো কোথায় ছিল?’
স্থানীয়রা জানান, তিনমাস আগে বিএনপির ওই অফিস উদ্বোধন করা হয়। ১৫ দিন না যেতেই হারুন ওই অফিসে যাতায়াত শুরু করেন। সঙ্গে নিয়ে যান আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকর্মী। দিন এবং রাতভর অফিসে জমিয়ে আড্ডা দেন। বিএনপির অফিসে আওয়ামী লীগের নেতার আড্ডা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে অনেক নেতাকর্মী পার্টি অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান উপজেলা বিএনপির সদস্য ও লক্ষিন্দর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী আকন্দ।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় হারুন আর রশিদের সঙ্গে। তিনি এক গাল হেসে বলেন, এটা আসলে বিএনপির পার্টি অফিস না। এটা একটা খোলা ঘর। কারণে অকারণে ওই ঘরে যাওয়া হয়। ওই ঘরটি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইকবাল তালুকদারের ভাই খোরশেদ তালুকদারের। সম্পর্কে ইকবাল তালুকদার আমার মামা লাগে। ছবিটি যে রাতে তোলা হয়েছে সেই রাতে ওই ঘরে আড্ডায় আমার সঙ্গে ছিল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।
লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এই প্রথম জানতে পারলাম। আর গারোবাজারের ওই অফিসটা ইউনিয়ন বিএনপির অফিস না, ওইটা ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। ওইখানে বসেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইকবাল তালুকদার।
ইকবাল তালুকদার বলেন, লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা এই অফিসে বসেন। আওয়ামী লীগ নেতা হারুন আর রশিদ আমার বোনের দেবরের ছেলে। সম্পর্কে ভাগিনা। কখন সে এই অফিসে এসে এ কাজ করেছে আমি জানি না।
ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে যদি কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
