ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

জিন্স প্যান্টের রঙ কেন নীল’ই হয়

আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম

ফ্যাশন দুনিয়ায় ডেনিমের কদর কখনও কমেনি, কমবেও না। তাই তো বছরের পর বছর ধরে স্টাইলিংয়ের দুনিয়ায় রীতিমতো রাজত্ব করছে জিন্সের প্যান্ট। কখনও ক্লাসিক ব্লু ডেনিম সকলের মন জয় করে তো কখনও আবার হাল ফ্যাশনে নজর কাড়ে প্যাস্টেল শেডের জিন্সের প্যান্ট। কিন্তু আপনি যখন দোকানে জিন্স কিনতে যান, তখন কি একটা জিনিস খেয়াল করেছেন? দেখবেন সেখানে অধিকাংশ জিন্সের রঙই হয় নীল। এমনকী ফ্যাশন দুনিয়াতেও নীল রঙের ডেনিমেরই কদর বেশি। এদিকে সমীক্ষাও জানাচ্ছে, নীল ডেনিম প্যান্টের উৎপাদনই বেশি হয়। কিন্তু এত রঙ থাকতে জিন্সের ক্ষেত্রে কেন নীল রঙকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়?

আসলে জিন্সের প্রভাবশালী রঙ হিসেবে নীলের প্রচলন কাকতালীয় নয়। এর পিছনে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। যা বছরের পর বছর ধরে উৎপাদন হচ্ছে। ভোক্তাদের পছন্দের তালিকাতেও রয়েছে।

ঐতিহাসিক শিকড়

উনিশ শতকের দিকে ডেনিম ফেব্রিক বাজারে আসে। তখন এগুলো স্থায়িত্ব এবং দৃঢ়তার জন্য বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। জিন্স প্রথম ওয়ার্কওয়্যার পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই সময় উদ্ভিদ থেকে তৈরি নীল রঙটি সবচেয়ে টেকসই রঙ ছিল। ডেনিম ফ্যাব্রিকের সাথে রঙটি ভালভাবে লেগে থাকত। ধুলেও এই রঙ কাপড় থেকে মুছে যেত না। এই স্থায়ীত্বের জন্যই নীল জিনস জনপ্রিয়তা লাভ করে।

 

সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

জিন্স প্রথমে ওয়ার্কওয়্যারের জন্য তৈরি হলেও, এক সময় তা ফ্যাশনে রূপান্তরিত হয়। এর পিছনে নীল রঙের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, নীল জিন্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্রোহ এবং যুব সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে ওঠে। জেমস ডিন অভিনীত ‘রেবেল উইদাউট এ কজ’ সিনেমাতে ডেনিমের সাথে বিদ্রোহী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। যার কারণে এটি জনপ্রিয়তা পায়। ধারণা করা হয় যে, নীল জিন্স তারুণ্যের স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে। এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটি নীল রঙের জিন্সকে আরও দৃঢ় করেছিল। 

এটি কঠোরতার প্রতীক ছিল। এর পাশাপাশি, ঐতিহ্যগত রীতিনীতি থেকে বিরতিরও প্রতীক হয়ে ওঠে। মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নীল রঙ মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। নীল রঙ প্রশান্তি, বিশ্বাস এবং নির্ভরযোগ্যতার সাথে যুক্ত। এই রঙটি স্থিতিশীলতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। তাই নীল জিন্স মানুষের দৈনন্দিন পোশাকের একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীল রঙ অজান্তেই মানুষের মনে সুরক্ষা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এ জন্য, এর প্রতি বেশিরভাগ মানুষ আকৃষ্ট হয়। নিরপেক্ষ রঙ হিসেবে অন্যান্য রঙের তুলনায় নীলের বহুমুখীতা রয়েছে। যার ফলে জিন্সের জনপ্রিয়তায় নীল রঙ অবদান রাখে।

শিল্প উৎপাদন সুবিধা

উৎপাদনের দৃষ্টিকোণ থেকে, নীল জিন্সের কিছু সুবিধা রয়েছে।  প্রত্যেকটি নীল জিন্সকে একটি অনন্য চেহারা দেওয়া হয়। এই ব্যাপারটি ডেনিম পরিধানকারীদের স্বতন্ত্রতা প্রকাশের সুযোগ দেয়। এ ছাড়াও, নীল জিন্স ছোটখাটো অসম্পূর্ণতাগুলো লুকাতে পারে। হালকা রঙের জিন্সের ত্রুটিগুলো চোখে পড়ে। যেখানে নীল জিন্সের ত্রুটি এক ধরনের ফ্যাশন ওঠে। কিংবা বোঝাই যায় না। তাই উৎপাদনকারীদের জন্য এটি একটি সুবিধা হয়ে দাঁড়ায়।

গ্লোবালাইজেশন এবং ব্র্যান্ডিং

বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন শিল্পে নীল জিন্সের আধিপত্য আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। লিভাইস এবং র‍্যাঙ্গলারের মত ব্র্যান্ডগুলো সর্বজনীন প্রতীক হিসেবে নীল জিন্স প্রতিষ্ঠা করেছিল। ধীরে ধীরে, এই জিন্স আধুনিক বিশ্বে ফ্যাশনের প্রতীক হয়ে ওঠেছে। নীল জিন্সের স্থায়ীত্বই আসলে এর জনপ্রিয়তায় অবদান রেখেছে। শৈলী, স্বতন্ত্রতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যর ক্ষেত্রে এটি একটি কালজয়ী পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা প্রত্যেক প্রজন্মকে মুগ্ধ করেছে।

HM
আরও পড়ুন