ঢাকা
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

পর্যটন দিবসে কুয়াকাটায় হতাশ ভ্রমণপিপাসুরা

আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৭ পিএম

‘টেকসই উন্নয়নে পর্যটন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

পর্যটন কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠন দিবসটি ঘিরে নানা কর্মসূচি পালন করলেও বাস্তবে পর্যটন খাতে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কুয়াকাটায় সকাল ৯টায় পৌরসভা থেকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের অংশগ্রহণে র‍্যালি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে পর্যটন হলিডে হোমস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সেখানে বক্তারা পর্যটন খাতের উন্নয়ন, নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক মানে কুয়াকাটাকে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। 

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল- কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন, কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন, কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতি, কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এসোসিয়েশন,কুয়াকাটা হোটেল- মোটেল এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন, কুয়াকাটা খাবার হোটেল মালিক সমিতি, সামাজিক সংগঠন বয়েজ ক্লাব, কুয়াকাটা শুভ সংঘ ক্লাব।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক, ড. মোহম্মাদ শহীদ  হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (টুরিস্ট পুলিশ) হাবিবুর রহমান।

অন্যান্য অতিথিরা হলেন- কুয়াকাটা পৌর বিএনপি সভাপতি, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামের আমির, টোয়াক সভাপতি, হোটেল মোটেল ও খাবার হোটেলের সভাপতি, সামাজিক সংগঠনের সভাপতিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলাপাড়া উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন সাদেক।

তবে এমন আনুষ্ঠানিকতা পর্যটকদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। তারা বলছেন, বছরের পর বছর শুধু দিবস পালন হয়, র‍্যালি আর আলোচনার মধ্যেই সব সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবে পর্যটন অবকাঠামো, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা কিংবা আধুনিক সেবার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কুয়াকাটায় পর্যটকদের জন্য আলাদা তেমন কোন ব্যতিক্রমী আয়োজন ছিল না। যেখানে কক্সবাজার এই দিবসকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আর বিশেষ ছাড়ে সেজে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটও উৎসবমুখর পরিবেশে রঙিন হয়ে উঠেছে। অথচ কুয়াকাটার পর্যটন কেন্দ্র একেবারেই নিরব ও নিস্তব্ধ ছিল।

হোটেল-মোটেল সংগঠন থেকে ডিসকাউন্টের ঘোষণা দিলেও তা কৌশলে পর্যটকদের কাছ থেকে উসুল করছে তারা। খাবার হোটেল নিয়ে পর্যটকদের ক্ষোভের শেষ নেই। 

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব পর্যটন দিবস কুয়াকাটায় পালন হচ্ছে। কিন্তু সৈকতে আসতেই ভাঙা রাস্তা আর বর্জ্যের স্তূপ দেখে হতাশ হয়েছি। পর্যটন দিবস শুধু র‍্যালি আর বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ মনে হচ্ছে।

খুলনা থেকে আসা পর্যটক রেহানা পারভীন বলেন, কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। কিন্তু পর্যটকের জন্য নিরাপদ পরিবেশ, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত হোটেল সুবিধা নেই। প্রতি বছর শুধু দিবস উদযাপন হলেও কোনো বাস্তব পরিবর্তন চোখে পড়ে না।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নয়ন আবেগের সাথে বলেন, পর্যটন দিবসের কথা শুনে কুয়াকাটা বেড়াতে এসেছি। ভেবেছিলাম বড় ধরনের ডিসকাউন্ট পাব, কনসার্ট উপভোগ করতে পারব, নানা সুযোগ-সুবিধা থাকবে। কিন্তু সবকিছুই বৃথা মনে হচ্ছে যেন নিরবখানা শহরে এসেছি।

পর্যটনকর্মী হোসাইন আমির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পর্যটকদের জন্য কোনো ব্যতিক্রমী আয়োজন নেই, বরং দিবস পালন হচ্ছে শুধু আনুষ্ঠানিকতায়।

টোয়াক সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুশার বলেন, প্রতি বছরই কাগজে কলমে নানা পরিকল্পনা শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে কুয়াকাটায় কোনো পরিবর্তন আসে না। অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া পর্যটনের আসল সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব নয়।

হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, পর্যটন দিবসকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজন হয়, অথচ কুয়াকাটা একেবারেই নিরব থাকে। এতে পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

এদিকে জেলা প্রশাসক পটুয়াখালী জানান, পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কুয়াকাটায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে এসব বাস্তবায়ন হলে পর্যটকরা উন্নত সেবা পাবেন।

এদিকে স্থানীয় ক্ষুদ্র পর্যটন ব্যবসায়ীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক সেবা নিশ্চিত না হলে কুয়াকাটার পর্যটন শিল্প পিছিয়েই থাকবে।

NJ
আরও পড়ুন