ঢাকা
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

জীবনে পরিবর্তন দরকার, ৫টি হাদিসের আমল করুন

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ এএম

জীবনে সবাই পরিবর্তন আনতে চাই । আমল ইবাদত, অন্যের প্রতি কোমলতা, অসহায়কে দান করা, নিয়মিত নামাজ পড়া—সবই করতে চাই। কিন্তু অনেক কিছু প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দেয়। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে পরিবর্তন আনতে সহায়ক হতে পারে পাঁচটি হাদিস। 

দানে কখনো সম্পদ কমে না

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, সাদাকা করলে সম্পদ কমে না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা উন্নীত করেন। (সহিহ মুসলিম)

এই হাদিসের মাধ্যমে রাসুল (সা.) এই বার্তা দিয়েছেন যে, সাদাকায় কখনো ব্যক্তির সম্পদ কমে না; বরং এর মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হয়। আল্লাহ এর মাধ্যমে মানুষকে অপরিসীম কল্যাণ দান করেন। ফলে তার সবকিছুতে বৃদ্ধিই হয়, কমতি হয় না।

প্রতিশোধ নেয়ার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কাউকে ক্ষমা করে আল্লাহ তার শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।

আর কাউকে ভয় না পেয়ে অথবা কারো তোষামোদ না করে অথবা কারো থেকে উপকার লাভের প্রত্যাশা না করে কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হয়, তিনি তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। 

দুই রাকাত সুন্নত জীবন বদলে দেবে

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ফজরের দুই রাকত সুন্নত পৃথিবী ও পৃথিবীতে অবস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম)

ফজরের নামাজ পড়া আমাদের জন্য কঠিন। তবে ফরজের এই সুন্নত পড়ার অভ্যাস করলে তা আমাদের জন্য ফজর পড়াকেও সহজ করে তুলবে। ফলে নামাজ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছুর থেকে উত্তম বস্তু লাভের সওয়াব অর্জন হবে। এই বিষয়টি মাথায় রাখলে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সহজ হবে।

অন্যায় দেখলে নীরবতা নয়

আবু সাঈদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি এই ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা। যদি এরও সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করে। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ইমাম। (মুসলিম)

এই হাদিসটি একজন মুসলিমকে ন্যায়ের পক্ষে থাকার দীক্ষা দেয় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শেখায় এবং সাহসী হতে উৎসাহিত করে

মুসলমানের পাঁচ অধিকার আদায়ে চেষ্টা করুন

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক মুমিনের ওপর আরেক মুমিনের পাঁচটি অধিকার আছে—সালামের উত্তর দেওয়া, অসুস্থতায় খোঁজ নেওয়া, জানাজায় অংশ নেওয়া, দাওয়াত গ্রহণ করা এবং হাঁচির সময় আলহামদুলিল্লাহ বললে তাকে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে জবাব দেওয়া।

একজন মুসলিমের এই অধিকারগুলো সহজেই আমাদের আমল পর্যালোচনা করতে সাহায্য করে। এসবই একজন মুসলমানের জীবনের বিভিন্ন অবস্থায় পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধের পরিচয় প্রকাশ করে। অনেক সময় আলস্যের কারণে আমরা এসব অধিকার আদায় করি না। কেয়ামতের দিন এসব অধিকার নিয়েও বিচার হবে।

এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয়—যত ব্যস্তই হই না কেন, অন্যের হক যেন অবহেলা না করি।

কোমলতা জীবনে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি কোমলতা ও নম্রতা নিজের জন্য আবশ্যক করে নাও। কঠোরতা ও নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে বাঁচাও। যে জিনিসে নম্রতা ও কোমলতা থাকে, সেটাই তার সৌন্দর্যের প্রতীক হয়। আর যে জিনিস থেকে তা প্রত্যাহার করা হয়, তা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।’ (মিশকাত, হাদিস : ৪৩১)

আমরা মনে করি কঠোর না হলে টিকে থাকা যায় না। কেউ দয়া দেখালে তাকে দুর্বল ভাবা হয়। তাই আমরা অনেকেই মনে করি বিনয় বা কোমলতা দেখালে মানুষ সুযোগ নেবে।

কিন্তু এই হাদিস আমাদের বলছে, কোমলতা দুর্বলতা নয়; বরং তা আল্লাহর গুণ। পরিবার, বন্ধু, সমাজ—সবখানে কোমল আচরণ করলে অন্যরাও আপনার প্রতি সদয় হবে এবং আপনি সবার প্রিয়পাত্রে পরিণত হবেন।

HN
আরও পড়ুন