শুকনা মৌসুমে একাধিক ডুবোচর জেগেছে উপকূলীয় এলাকার কঁচা ও বলেশ্বর নদী। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ফেরি ও অন্যান্য যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল। পণ্য আনা-নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা। এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নদী দুটি। প্রায় আট বছর ধরে শুকনা মৌশুমে নৌযান চলাচল কমে এসেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিকল্প হিসাবে সড়ক পথ ব্যবহারের কারণে খরচ বেড়েছে। ফলে পণ্যের দাম বেড়েছে স্থানীয় বাজারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী দুটি খননে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইন্দুরকানী উপজেলায় টগড়া ফেরিঘাটে পশ্চিম পাশে কঁচা নদীতে জেগে উঠেছে প্রায় চার কিলোমিটার চর, এছাড়া বলেশ্বর নদের ওপর নির্মিত শহীদ ফজলুল হক মনি সেতুর উত্তর প্রান্তে তীর ঘেঁষে প্রায় দুই কিলোমিটার জুরে জেগে উঠেছে একটি চর। একমাস ধরে এখানে ফেরি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভাটার টানে পানি কমে গেলেই টগরা প্রান্তে ফেরি আটকে যায়। ফলে ট্রলারে নদী পারাপার করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
এই নদীর সন্ন্যাসী পয়েন্টসহ একাধিক স্থানে ছোটবড় অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা। এমবি নামে একটি নৌযান খুলনা-মোংলা-বরিশাল নৌপথে নিয়মিত পণ্য পরিবহন করে। ওই নৌযানের মাষ্টার তরিকুল ইসলামের কথা হয় এসময় তিনি জানান, ডুবোচরের কারণে সন্ন্যাসী পয়েন্টে নৌযান থামিয়ে রাখতে হয়। জোয়ারে পানি বাড়লে চালনা শুরু করেন। টগড়া পয়েন্টে কঁচা নদীর অর্ধেকটা জুড়ে চর পড়েছে। ফলে মাঝে মধ্যেই বাধার মুখে পড়তে হয়।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানায়, যুগ যুগ ধরে এ উপজেলার বাসিন্দারা কঁচা ও বলেশ্বর নদ দিয়ে ঢাকা-মোংলা ও খুলনাগামী লঞ্চ, স্টিমার ও ট্রলারে যাতায়াত করে আসছেন। এ ছাড়া পণ্যবাহী দেশি-বিদেশি জাহাজ, কার্গো চলাচল করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্দিষ্ট পথ ছাড়া ভাটার সময় বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে না। অসংখ্য ডুবোচরের কারণে নদী দুটির গতিপথও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
চর পড়ার কারণে খুলনা থেকে নৌপথে মালপত্র পরিবহনে সমস্যার কথা জানান ইন্দুরকানী বাজার সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে সড়ক পথে মালপত্র আনছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যয় করতে হচ্ছে দ্বিগুন অর্থ।
কঁচা নদীর তীরে পড়েছে উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো. আ. রাজ্জাক বলেন, কঁচা নদীর টগড়া প্রান্তে অর্ধেকের বেশি এলাকাজুড়ে চর জেগেছে। এতে জোয়ারের সময় ছাড়া অন্য সময় নৌযান চলতে বাধার মুখে পড়ছে। একই সঙ্গে টগড়া-চরখালী রুটে ফেরি চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) বরিশাল ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন উর রশীদ জানান, বর্ষার মৌসুম চলে আসায় খনন কাজ সম্ভব হচ্ছে না। আগামী অর্থ বছরের শুকনা মৌসুমে কঁচা ও বলেশ্বর নদের ডুবোচরের খনন কাজ শুরু করা হবে।
