চট্টগ্রামে প্রশাসনের নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানিকারক, মিলমালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমদানিকারকেরা ১৫৩ টাকায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল সরবরাহ করবেন। আর পাইকারিতে ১৫৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি কেরতে হবে। খোলা তেলের নির্ধারিত নতুন এ দাম পুরো রমজান মাসসহ আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
তবে এ দর কার্যকর হয়নি বাজারে। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হুট করে দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিলেই সেই দামে বিক্রি সম্ভব না। এখন যা তেল রয়েছে তা আগের আনা। সেগুলো অনেক বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই এখন নির্ধারিত দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। আগের আনা তেলগুলো শেষ হতে হবে। পাশাপাশি নতুন তেল ডেলিভারির সময় যদি কম দামে পাওয়া যায় তাহলে আমরাও সেভাবে বিক্রি করতে পারবো।
বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইসহ নগরের বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা আগের বেশি দামেই খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। আগের মতো খোলা সয়াবিন তেল খুচরায় ১৯৫ টাকায় (কেজি), আর পাইকারিতে ১৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে নতুন নির্ধারিত দামে কোনো দোকানেই তেল বিক্রি হচ্ছে না। আবার অনেক ব্যবসায়ী নতুন করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়ে জানেনও না।
গলির কয়েকটি দোকানে নির্ধারিত দামে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে না পেরে চাক্তাইয়ে আসেন বাকলিয়া রাজাখালী এলাকার বাসিন্দা শহীদুল আলম। সেখানেও গিয়েও তিনি দেখতে পান আগের বাড়তি দামেই এখনো সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার,৪ মার্চ) টিভিতে দেখলাম চট্টগ্রামে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। একইসঙ্গে দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মনে করেছি গতকাল বিকেলে না পেলেও আজ সকাল থেকে পাব। তবে গলির দোকানের পাশাপাশি চাক্তাইয়ে এসেও কম দামে তেল নিতে পারিনি।’
শুধু শহীদুল আলমই নন; তাঁর মতো অনেকেই ১৬০ টাকা দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির খবর শুনে বাজারে গিয়েছেন। তারা কেউই সেই দামে তেল না পাওয়া অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
একদিন আগে সভা ডেকে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরদিনই বাজারে দেখা মিলছে বোতলজাত তেলের। বুধবার নগরের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইসহ বেশ কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল।
এদিকে, নতুন দামে নির্ধারণ করার পরদিনই বাজার পরিদর্শনে গিয়ে খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র শাহাদাত হোসেনও বোতলজাত তেলের হদিস পেয়েছেন।
বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে নগরের কাজির দেউড়ি বাজারে পরিদর্শনে যান মেয়র শাহাদাত। দোকানে তেল আছে কিনা এবং তেলের মূল্য তদারকি করেন। এ সময় বোতলজাত তেল চোখে পড়েছে মেয়রের।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার(৪ মার্চ) পর্যন্ত আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে দেখতে পেয়েছিলাম, বোতলজাত সয়াবিন গায়েব ছিল। কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ (বুধবার) থেকে দোকানে আমরা বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখতে পাচ্ছি। আমি আশাবাদী, কাল থেকে আরও বেশি সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটি টিম খাতুনগঞ্জে গেছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা ১৫৫ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের তেল বিক্রি করছে কি না, সেটা মনিটরিং করছে। নির্ধারিত এ তেলের দাম যতক্ষণ পুরো চট্টগ্রামে ১০০ শতাংশ কার্যকর না হবে ততদিন আমাদের অভিযান চলবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করবে। যারা নির্দেশনা মানবে না তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এর আগে, গত ৩ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকটে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে যান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। পরিদর্শনে গিয়ে ‘ভোজ্যতেল উধাও’র সত্যতা পেয়ে তেলের উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের বৈঠকে ডাকেন তারা দুজন।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ওই বৈঠকে সবার মতামতের ভিত্তিতে আমদানিকারক থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত খোলা তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমদানিকারকরা ১৫৩ টাকা, ট্রেডার্সে ১৫৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকা প্রতিলিটার খোলা তেল বিক্রি করবে। যা (মঙ্গলবার) থেকে কার্যকর হবে। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যেকোনো পর্যায়ে কেউ যদি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি।
সয়াবিন তেল সংকট পরিস্থিতির উন্নতি আজ থেকেই: বাণিজ্য উপদেষ্টা
চট্টগ্রামে সয়াবিনের খুচরা মূল্য ১৬০ টাকা নির্ধারণ
চট্টগ্রামে রোজার আগে ‘সয়াবিন তেল সংকট’