ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

‘খরছি’ জালে হুমকিতে মৎস্য সম্পদ

আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০০ পিএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনায় দিনদিন বাড়ছে অনুমোদনহীন ট্রলিং বোটের দৌরাত্ম্য। ইঞ্জিনচালিত এসব নৌযানে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের পোনা মাছ। ফলে বিপন্ন হচ্ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ। ভেস্তে যাচ্ছে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের সব ধরনের পরিকল্পনা।

অতিদ্রুত এই চরঘেরা “খরছি জাল” দমানো না গেলে ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের বিশাল মৎস্য সম্পদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অসাধু চক্রটি মাছ শিকার করে। উত্তরের বাতাসে শুরু হয়ে দক্ষিণা বাতাসসহ প্রায় ৬-৭ মাস মাছ ধরে। স্থানীয় ভাষায় এটিকে ‘খরছি জাল’ বলা হয়।

প্রতিটি জালের টিমের সাথে থাকে একটি ছোট নৌকা (আনুমানিক মূল্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা) ও একটি বড় নৌকা (ট্রলিং বোট প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা)। প্রতিটি জালের মূল্য হয় আড়াই থেকে ৪ লাখ টাকা।

এসব জাল দৌলতখাঁ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়, ভারত থেকেও আসে। প্রতিটি জালের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট, দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ফুট।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভোলা ও লক্ষ্মীপুর জেলার সীমান্তে মাতাব্বরচরসহ মেঘনায় জেগে উঠা নতুন নতুন চর ঘিরে নিষিদ্ধ জালের উপদ্রব। এসব জালে জাটকা, বাটা, পোয়া, রিটা, আইড়, বোয়াল ও কোরালসহ যাবতীয় সামুদ্রিক মাছ আটকায়। নিয়ম ভঙ্গ করে ৪০ মিটার গভীরতার কম পানিতে ট্রলিং বোটে মাছ শিকার করছেন অসাধু চক্রের সদস্যরা। মাছ ধরে মধ্যরাতসহ ভোরবেলায় স্থানীয় কিছু সংখ্যক আড়তদারদের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ কমলনগরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। আবার কিছু কিছু মাছ শুঁটকি করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন।

আবুল কালাম মাঝি নামে এক জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ইলিশ শিকারের জন্য ট্রলারে আমরা ১৬ জন মানুষ সাগরে ১০ দিনের জন্য যাই। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ না পেয়ে কূলে ফিরি। অবৈধ ট্রলিং বোটের প্রভাবে আমরা খালি হাতে ফিরে আসি। জাটকাসহ সব প্রজাতির কোটি কোটি টাকার পোনা মেরে ফেলেছে।

চরকালকিনি ইউনিয়নের আজাদ মাঝি বলেন, একটি চক্র গত ২ মাস ধরে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে মাছ শিকার করেছে। উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন মনিটরিং নেই। ফলে দিন দিন প্রতিযোগিতা করছেন অন্যান্য প্রভাবশালীরাও।

ফিরোজ নামের আরেকজন জেলে বলেন, ট্রলিং বোট হওয়ার পর থেকে আমরা সাধারণ জেলেরা না খেয়ে মরে যাচ্ছি। তারা ছোট জাল দিয়ে সব মাছ ধরে ফেলে। আর আমরা মাছ পাই না। তাদের দেখাদেখি এখন অনেক ট্রলার মালিকই এই জাল বানাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে মাছের আকাল দেখা দেবে। আমরা চাই, এসব অবৈধ জাল বন্ধ হোক।

গবেষকরা বলছেন, নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরায় সব ধরনের মাছের পোনা, রেণু ও জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বড় মাছের জন্য নেতিকবাচক প্রভাব পড়ছে।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে সমুদ্রে ক্যাটফিশ প্রজাতির মেদ, মোচন, গাগড়া ও ট্যাংরা মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। এসব মাছ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় বেশি পাওয়া যায়। বরিশাল ও নোয়াখালী জোনে কোরাল এবং জাভা মাছের উৎপাদনও কমেছে। নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে নির্বিচারে মাছ আহরণ করায় সমুদ্রে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়বেন এ অঞ্চলের জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, আইন অনুযায়ী খরছি জাল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ মেঘনার নদীর দুটি স্পটে মাছ ধরার খবর পাওয়া গেছে। আমরা এ পর্যন্ত কোন অভিযান পরিচালনা করিনি। খুব দ্রুত প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

তিনি আরও বলেন, একটি চক্র জেলা-উপজেলার বিভিন্ন দোকানে গোপনে এসব জাল বিক্রি করে আসছে।  

কমলনগর উপজেলা নিরবাহী অফিসার মো. রাহাত উজ জামান বলেন, মেঘনায় আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধভাবে কেউ মাছ শিকার করলে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য সম্পদ আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

NJ
আরও পড়ুন