ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

স্বামীর হাতে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ, বাড়িতে জনতার অগ্নিসংযোগ

আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীকে ৩ দিন নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে মাদকাসক্ত স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত গৃহবধূর শাশুড়ী জোবেদা খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে। স্বামী ও শ্বশুর ঘটনার পর পালিয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টায় শ্রীপুরের বরমী মধ্যপাড়া (মৃধা বাড়ী) গ্রামে ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

এর আগে বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে গৃহবধূকে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ীর নির্যাতনের পর গোপনাঙ্গে বাঁশ বা ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।

নিহত গৃহবধূ সুইটি আক্তার নিশি (২২) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার চাকুয়া গ্রামের আফসারুল ইসলামের মেয়ে।

অভিযুক্ত স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধা (৩৪) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী মধ্যপাড়া (মৃধা বাড়ী) গ্রামের শাহ্জাহান মৃধার ছেলে। নুরুল ইসলামের নামে শ্রীপুর থানায় ৩টি মাদক মামলা রয়েছে।

নিহতের খালাতো বোন আকলিমা আক্তার জানান, প্রায় দেড় বছর আগে সুইটি আক্তার নিশির সাথে নুরুল ইসলাম মৃধার বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৪ মাসের এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর সুইটি জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত ও এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এর প্রতিবাদ করলেই মাদকাসক্ত স্বামী বিয়ের পর থেকে সুইটিকে নির্যাতন করেন। গত ৩-৪ দিন আগে শ্রীপুর থানা পুলিশ নুরুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেপ্তার করতে যায়। তাকে না পেয়ে পুলিশ নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুইটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সুইটি তার স্বামী মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। এ কথা জানতে পেরে স্বামী নুরুল ইসলাম, তার শ্বশুর শাহ্জাহান মৃধা এবং শাশুড়ী জোবেদা খাতুন তাকে নির্যাতন করতে থাকে।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের বিয়ের ঘটক নাজমুল মোবাইল ফোনে সুইটির স্বজনকে তার মৃত্যুর খবর জানায়। ঘটনার পর স্বামী স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধা এবং শ্বশুর শাহ্জাহান মৃধা বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়। স্বজনেরা নুরুল ইসলামের বাড়িতে এসে সুইটির মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং শ্বাশুড়ি জোবেদা খাতুনকে আটক করে।

এদিকে স্ত্রীকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে স্থানীয় জনতা নুরুল ইসলামের ২ বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আগুনে দুইটি বাড়ির ৮টি কক্ষ এবং আসবাবপত্র পুড়ে যায়। গৃহবধূর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সুইটি অসহায় মেয়ে। ছোটকাল থেকে বাবা-মা তার খবর নিতেন না। খালা কলিমা বেগমের আদরে সুইটি বেড়ে ওঠেছে। ঘটক নাজমুলের সহায়তায় দেড় বছর আগে সুইটিকে নুর ইসলাম মৃধার সঙ্গে বিয়ে দেন। নুর ইসলাম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।

ঘাতক স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধা।

৪ মাসের দুধের শিশুর সামনেই সুইটিকে নির্যাতনের পর গোপনাঙ্গে বাঁশ অথবা ছুরি দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। শিশুটির শরীরেরও আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।

শ্রীপুররের মাওনা ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির বলেন, ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে বেলা ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা আগুন দিয়ে আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) জাহাঙ্গীর আলম জানান, মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে সুইটির দুই পা হাঁটুর নিচে থেঁতলানো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে লোমহর্ষক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, স্থানীয়দের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে গৃহবধূকে নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে শাশুড়ী জুবেদা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

NJ
আরও পড়ুন