ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

১০ বছর ধরে শিকলবন্দী দুই ভাই-বোন

আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

রাজবাড়ীর পাংশার একটি পরিবারের দুই মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই-বোন দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছে। অর্থের অভাবে হয়নি তাদের চিকিৎসা।

জানা গেছে, পাংশা উপজেলার মেঘনা মোল্লা পাড়া গ্রামের ফজাই মোল্লার ছেলে জালাল মোল্লা (৩৫) ও ছোট মেয়ে হাজেরা খাতুন (২৭) দুই জনই মানসিক রোগী। জালাল এক সময় কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বছর দশেক আগে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি।

অন্যদিকে, বিয়ের পর এক সন্তানের মা হন হাজেরা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই একমাত্র সন্তান নানাবাড়িতে পানিতে ডুবে মারা যায়। সন্তানের শোক সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারান মা হাজেরাও। এরপর ভেঙে যায় তার সংসার।

২ ভাইবোনের আশ্রয় হয়ে ওঠেন বৃদ্ধ মা-বাবা। সন্তানদের সুস্থ করার আশায় তারা নিয়ে যান পাবনা মানসিক হাসপাতালে। কিন্তু টাকার অভাবে মাঝপথেই থেমে যায় তাদের চিকিৎসা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মানসিক সমস্যা, অস্বাভাবিক আচরণে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবার।

নিরুপায় বাবা-মা এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। নিজ সন্তানদের পায়ে লোহার বেড়ি ও শিকল পরিয়ে রাখতে শুরু করেন তারা। সেই শিকলই এখন তাদের সারাদিনের সঙ্গী।

জালাল মোল্লা ও হাজেরা খাতুনের বাবা মো .ফজাই মোল্লা বলেন, ১০ বছর আগেও আমার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। মাঠে কঠোর পরিশ্রম করত। সংসারের কাজে সাহায্য করত। হঠাৎ করেই তার মানসিক সমস্যা শুরু হয়। আমরা তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করি। কিছুদিন চিকিৎসা করিয়েছিলাম।কিন্তু টাকার অভাবে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে বাড়িতে নিয়ে আসতে হয় তাকে। বাড়ি থেকে মাঝে মাঝে সে নিখোঁজ হয়ে যেত এবং সবাইকে মারধর করত। তাই বাধ্য হয়ে তার পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের পর একটি সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে সন্তান আমাদের বাড়িতে এসে পানিতে ডুবে মারা যায়। সেই আঘাত সইতে না পেরে মেয়েটিও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তারও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

মা আকিরন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে-মেয়ে দুজনই মাঝে মাঝে আমাকে খুব মারধর করে। শরীরজুড়ে কত আঘাত সইতে হয়, তা কাউকে বলা যায় না। তবুও তারা তো আমার সন্তান! সন্তানকে ফেলে আমি কোথায় যাব? আমি রান্না করে ঘরে খাবার রেখে দিই। যখন ইচ্ছা হয়, তখন তারা খেয়ে নেয়।তার না খেয়ে থাকবে, এটুকু আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। 

এলাকাবাসী জানান, জালাল মোল্লা ও হাজেরা খাতুন একসময় স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতেন, কাজ করতেন। এখনো সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন পেলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। যদি সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে দুই ভাই-বোনকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম আবু দারদা বলেন, ২ জন প্রতিবন্ধী ভাই-বোন ইতোমধ্যেই উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে এর বাইরেও যদি সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন পাওয়া গেলে আমরা অবশ্যই যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করব।

NJ
আরও পড়ুন