সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই উৎসবের আমেজ। তাই দেবীদুর্গাকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আর ৬ দিন পরেই গজে (হাতি) চড়ে দেবীদূর্গা আসছেন মর্তলোকে। এজন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা গড়ার কারিগররা। আর সারাদেশের মতো শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপনের আশায় নওগাঁর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এবার এ জেলায় ৮০১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে চলছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৬টি, পৌরসভায় ৫৯টি, মহাদেবপুর উপজেলায় ১৫৩টি, মান্দায় ১১৯টি, বদলগাছীতে ১০৩টি, পত্নীতলায় ৭৮টি, নিয়ামতপুরে ৫৮টি, আত্রাইয়ে ৫১টি, রানীনগরে ৪৭টি, ধামইরহাটে ৩২টি, সাপাহারে ১৮টি ও পোরশা উপজেলায় ১৭টি পূজামণ্ডপ স্থাপনের কাজ চলছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বছর এ জেলায় ৮১৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জেলার একাধিক উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, কাঁদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে তৈরি করেছে দেবীদূর্গার প্রতিমা। রাত-দিন শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সাথে নিপুণ হাতে গড়ে তুলেছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী আর অসুরের প্রতিমা।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবারে দেবীদুর্গা মর্তলোকে আসছেন গজে চড়ে আর ফিরবেন দোলায়। মাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।

প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন দেবীদুর্গাকে পরিপূর্ণ রুপ দিতে রঙ তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এখানে রঙ তুলিতে জানান দিচ্ছেন তাদের হাতের নৈপুণ্য। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাক-ঢোল, কাঁশি-বাঁশির কারিগররা। এছাড়া মণ্ডপগুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে একাধিক মণ্ডপে প্রতিমায় রঙ তুলির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছে না বলে জানান কারিগরা। আর্থিকভাবে লাভবান না হলেও পৈত্রিক পেশা ধরে রাখতে এ কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

জেলার নজিপুর পৌরসভায় প্রতিমা তৈরি করছেন দুলাল কারিগর। তাকে সহযোগিতা করছেন তার ভাই মহিন্দ্রসহ অনেকে। আগের দামেই প্রতিমা তৈরি করে দিচ্ছেন তারা। কিন্তু উপকরণের মূল্য একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। ২ যুগ ধরে এই পেশায় জড়িত। এবার তারা ৮টি প্রতিমা তৈরি করছেন। যথাসময়ে সকল প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে বলে জানালেন তারা।
জেলার বদলগাছী উপজেলায় প্রতিমা তৈরি করছেন বাদল নামের এক কারিগর। তিনি জানান, ৪২ বছর ধরে এ কাজ করছি। এবার প্রতিমার দাম খুব কম। এটার দাম দেড় লাখ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ৯০ হাজার দিয়ে করতে হচ্ছে। তবে এ বছর কাজের চাপ বেশি। চাপ আগের তুলনায় বেশি হওয়ায় দিনরাত খাটতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসে কাজ করছি। আশা করছি, সময়মতো সব কাজ শেষ করতে পারব।
শহরের কালিতলা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির শিল্পী সুধির চন্দ্র জানান, মাটির কাজ শেষ হয়েছে। রঙ তুলির কাজ করা হচ্ছে। প্রতিমাগুলো মনোমুগ্ধকর ও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে সব প্রতিমা তৈরির কাজ।
তারা সকলেই জানান, প্রতিমা তৈরির এ কাজ শুধু পেশা নয়, ধর্মীয় আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা থেকে করা হয়। সেই জন্য দুর্গা মাকে নিজের মায়ের মতো করেই গড়ি।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র সরকার এবং পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক পিযুষ কান্তি সরকার বলেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী তিথিতে শুরু হবে এ পূজা উৎসব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর ও সুষ্ঠ আছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় পূজা সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
তারা আরও বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের কাছে প্রত্যাশা, দর্শনার্থীরা যেন নির্দ্বিধায়-নির্বিঘ্নে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন এবং সকলেই যেন উৎসবমুখর পরিবেশে পূজার আনন্দ উপভোগ ও উদযাপন করতে পারে। ২ অক্টোবর দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হোসেন (প্রশাসন ও অর্থ) মুঠোফোনে বলেন, জেলায় সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিবেশ আছে। সব বিষয় মাথায় রেখে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটা প্লান করা আছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। জেলা পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য এই পূজা উৎসব ঘিরে তৎপর আছে। বজায় রাখার জন্য প্রতিটি পূজামণ্ডপসহ আশেপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উৎসব উদযাপন করতে পারে।
উল্লেখ, হিন্দু শাস্ত্রমতে, অসুরকে বধ করার জন্য দেবীদুর্গা আবির্ভাব হয়েছিলেন। তাই আগামী দিনেও তিনি সমাজের শান্তি রক্ষায় আবির্ভাব হবেন বলে প্রত্যাশা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
