১০৭ বছরের নুরজাহান বেওয়া এখনো চশমা ছাড়াই পড়েন কোরআন শরিফ। পড়েন পত্রিকা, করেন নিজের সব কাজ। এই বয়সেও রয়েছেন সুস্থ। শরীরে বাসা বাঁধেনি তেমন কোনো রোগব্যাধি। করছেন সুস্থ-স্বাভাবিক চলাফেরা।
নুরজাহান বেওয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের মহিষখোঁচা বাজারসংলগ্ন এলাকার মহির খানের স্ত্রী। বাংলা ১৩২৫ সালের মাঘ মাসে তার জন্ম বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শত বছর পেরিয়ে গেলেও নুরজাহান বেওয়ার এখনো রয়েছে চোখের জ্যোতি, কানেও শোনেন পরিষ্কার। চশমা ছাড়াই পড়েন পবিত্র কোরআন শরিফ, পড়েন পত্রিকা, ব্যবহার করেন মোবাইল ফোনও। কাপড় ধোয়া, ভাত রান্না, ঘর গোছানোসহ নিজের সব কাজ নিজেই করছেন। অন্যের সাহায্য ছাড়াই করছেন চলাফেরা। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও মনের দিক থেকে তিনি এখনো তরুণ। প্রখর মনোবল তার।
৪ ছেলে ও ৪ মেয়ের জননী নুরজাহান বেওয়া এখন একাই থাকেন বাড়িতে। স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে চান না। কোনো সন্তান বা নাতিদের কেউ তাকে নিজের কাছে রাখতে চাইলে তাদের সাফ জানিয়ে দেন, স্বামীর ভিটাতেই যেন তার মৃত্যু হয়।
ছেলে-মেয়েরাও হয়েছেন বৃদ্ধ। মারা গেছেন দুই ছেলে। তবে সন্তানরা কেউ মায়ের কাছে না থাকলেও মায়ের দেখাশোনার জন্য রেখেছেন সেবা করার দুইজন মানুষ। নুরজাহান বেওয়া সবার সঙ্গে করেন ভালো আচরণ, ভালোবাসেন আগের দিনের গল্প।
শিক্ষিত ও ধার্মিক এই নারী তৎকালীন স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ রংপুর কৈলাশ শঙ্কর বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। মেধাবী হওয়ায় পেয়েছেন শিক্ষা বৃত্তি। প্রতি মাসে আড়াই টাকা করে বৃত্তি পেয়েছেন তিনি। নিজের সন্তানদের করেছেনউচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। ছেলেরা সবাই করেছেন উচ্চ পদে চাকরি। সবার জন্য অনুকরণীয় এই মহীয়সী নারী।
ছোট মেয়ে সুলতানা বেগম (৬৫) বলেন, ‘আমার মা বয়সে ও শরীরে বৃদ্ধ হলেও মনের দিক থেকে তিনি বৃদ্ধ হননি। তিনি এখনো সুস্থ-সবল চলাফেরা করছেন। এটা সৃষ্টিকর্তার রহমত। আমার মা এখনো চশমা ছাড়াই কোরআন শরিফ পড়তে পারেন। পত্রিকা পড়েন। কেউ ফোন করলে নিজেই রিসিভ করে কথা বলেন। নিজের কাজ নিজেই করতে ভালোবাসেন।’ সুলতানা বেগম তার মায়ের জনা দোয়া চেয়েছেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল কাদের জানান, ১০৭ বছর বয়সেও বেঁচে থাকা ও সুস্থ থাকা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। এমন নেয়ামত আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, শুধু তাকেই দান করেন।
