শোবিজ তারকাদের আলো আসবেই গ্রুপ নিয়ে যেন ধোঁয়াশা থামছেই না। একের পর এক বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। কেউ কেউ গা বাঁচিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের তারা সকলেই সুবিধা ভোগ করেছিলেন। এদের মধ্যে জায়েদ খান উপ-কমিটির একটি পদেও দায়িত্বে ছিলেন। এমনকি শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা কালিন, কোটি টাকা বাজেটে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন তিনি।
মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এই গ্রুপে সে সময়ের পরিস্থিতি ও শোবিজ তারকাদের অবস্থান নিয়ে কথাবার্তা হতো। গ্রুপটি চালু করেছিলেন চিত্রনায়ক ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস, গ্রুপের সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ আরাফাত। এই গ্রুপেই অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস ছাত্রদের গায়ে গরম পানি ঢেলে দিতে বলেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেইসব চ্যাটের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে। ওই গ্রুপে কারা কারা ছিলেন সে সবও জানা গেছে।

এই গ্রুপে ছিলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খানও। তার একটি বক্তব্যও প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এখন দেশের বাইরে, আপনাদের সঙ্গে মানসিকভাবে আছি।’ গ্রুপে অবস্থান করা অন্য শিল্পীদের সঙ্গে জায়েদ খানও সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
‘আলো আসবেই’ নামের গ্রুপে মেসেজ ও অবস্থান সম্পর্কে জায়েদ খান বলেন, ‘দেখুন, ওই গ্রুপে আমাকে যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে যুক্ত ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, রিয়াজ, তথ্যপ্রতিমন্ত্রী এ আরাফাত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আমি যদি ওই গ্রুপ ত্যাগ করতাম তাহলে আমাকে রাজাকার বানিয়ে দেওয়া হতো। আপনাকে যদি আপনার অফিসের বস কোনো গ্রুপে যুক্ত করায়, আর আপনি যদি বেরিয়ে আসেন তাহলে আপনার বস কী মনে করবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন। তবে আমি একদম চুপচাপ ছিলাম, কারণ সেখানে অনেকের সঙ্গেই আমার নীতিগতভাবে দূরত্ব ছিল। আর যেসব বক্তব্য সেখানে পাওয়া গেছে, সেসব আমি সমর্থন করতে পারিনি বলেই চুপ ছিলাম।’
এছাড়াও একাধিক সূত্রে জানা যায়, চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও রিয়াজের সঙ্গে জায়েদ খানের শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময় থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল। ফলে ফেরদৌসের নেতৃত্বে জায়েদ খান কোনো মুভমেন্টে যেতে চাননি বিদেশে রয়েছেন বলে পাশ কাটিয়ে গেছেন; এমনটাই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন। মানসিকভাবে রয়েছেন- কেন এমন মেসেজ দিয়েছিলেন গ্রুপে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিল্পীরা সাক্ষাৎ করবে, এমন একটি প্রোগ্রাম ছিল। আমাকে বারবার পারসোনালি জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল কেন আমি মেসেজ দিচ্ছি না, ‘আপনাদের সাথে মানুষিক ভাবে সব সময় আমি আছি, আপনাদের অনুষ্ঠানে থাকতে পারছি না কারণ আমি দেশের বাইরে। এগিয়ে যান আপনারা।’
জায়েদ খান আরও বলেন, আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন আমি বরং আমার নিজের ফেসবুকে ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দিয়েছি। ৩১ জুলাই ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে আমি ভিডিওবার্তা দিয়েছি।’ জায়েদ খান মাঝেমধ্যে সরকারি প্রোগ্রামে গেলেও তার দাবি শিল্পী হিসেবে যতটুকু যাওয়া প্রয়োজন তিনি ততটুকুই গিয়েছেন। কোনো তেলবাজি বা চাটুকারিতার সঙ্গে তিনি ছিলেন না।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে অনুসরণ করেন যারা তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন আমি সরকারি দলের চাটুকারিতা করিনি, তৈলমর্দন করিনি, এমনকি সরকারি কোনো সুবিধাও আমি ভোগ করিনি; কোনো অনুদান নিইনি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাগিয়ে নিইনি। আমি অভিনয় ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিয়েই পড়েছিলাম। পড়ে যখন নিপুণ আমার সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে এফডিসিতেও ঢুকতে দেয়নি, তখন আমি আমার মতো করে চলা শুরু করেছি। আমি কখনো সরকারি প্রোগ্রামে গিয়েছি, যতটুকু একজন শিল্পী হিসেবে যাওয়া যায় ততটুকুই গিয়েছি।’
জায়েদ খান এই মুহূর্তে নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। শিগগির তিনি দেশে ফিরবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি নিউ ইয়র্কে রয়েছি। কানাডা-আমেরিকা দুই দেশে বেশ কিছু প্রোগ্রাম করেছি। আরও শো রয়েছে, সেসব শেষ করে দেশে ফিরব, শিল্পের মাঝে ফিরব, আমরা শিল্পী। আমাদের শিল্পের মাঝেই ফিরতে হবে।’
এছাড়াও আসবেই গ্রুপের প্রধান গ্রুপ এডমিন ফেরদৌস বর্তমান শিল্পী সমিতির মিশা-ডিপজল পরিষদকে বরংবার অনুরোধ করলেও তারা সেখানে যাননি বলে জানান চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী।
