আরও শক্তি সঞ্চয় করে পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট হারিকেন বেরিল ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ রূপ ধারণ করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবিয়ান উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের দিকে ধেয়ে আসছে বেরিল।
রোববার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, বেরিল ক্যাটাগরি ৪ এর হারিকেনে রূপ নিয়েছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট। মাত্র ৪২ ঘণ্টার মধ্যে এটি প্রবল আকার ধারণ করেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় বেরিল দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলের কাছে পৌঁছে গেছে এবং স্থানীয়দের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
স্থানীয় পূর্বাভাস সংস্থা সতর্ক করেছে, আটলান্টিকে মৌসুমের দ্বিতীয় বড় হারিকেন সোমবার (১ জুলাই) স্থানীয় সময় ভোরে উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে প্রাণঘাতী বাতাস এবং ঝড় বয়ে আনবে। গত রাত স্থানীয় সময় আটটা পর্যন্ত বেরিল বার্বাডোসের প্রায় ২০০ মাইল পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ মাইল বেগে বাতাস বইছিল ও ১৮ মাইল প্রতি ঘণ্টায় এটি পশ্চিমে চলছিল।
স্যাম লিলো নামে আরেক বিশেষজ্ঞের মতে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ থেকে বড় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে বেরিলের লেগেছে মাত্র ৪২ ঘণ্টা। আর আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাসে এর আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে মাত্রা ছয়বার।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ‘বেরিল’ এখন পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরে রেকর্ড করা প্রথম এবং জুন মাসে রেকর্ড করা একমাত্র ক্যাটাগরি ৪ হারিকেন।
হারিকেন এবং ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বিশেষজ্ঞ মাইকেল লোরির মতে, ‘বেরিল এই অঞ্চলে বছরের এই সময়ের জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং বিরল হারিকেন। আঘাত হানার আগেই এটি ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে।’
হারিকেনও এক ধরনের সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর, মধ্য ও পূর্ব-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবীয় সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়কে হারিকেন বলা হয়। সাধারণ যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কিউবা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এই হারিকেন আঘাত হানে।
এবারের মৌসুমে ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে যাওয়া প্রথম হারিকেন হলো বেরিল। ইতোমধ্যে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ক্যাটাগরি থ্রি-তে উন্নীত হয়েছে। এর মানে হলো এই ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে ১৭৯ থেকে ২০৯ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ বার্বাডোস, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা ও মার্টিনিক উপকূলের কাছাকাছি অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও শক্তিশালী হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগর লাগোয়া উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে সবার আগে আঘাত হানতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। ডমিনিকা, মার্টিনিক, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রানাডাইনস ও গ্রেনাডার নিয়ে গঠিত উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সময় এসব দ্বীপের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ ঢেউয়ের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার খবরে মানুষজন বাড়িতে খাবার মজুত করতে শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি তেলের জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। অন্যদিকে, স্থানীয় সময় শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী হারিকেন আঘাত হানার সময় বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও প্রতিবেশীদের খবর নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি বড় এবং ধ্বংসাত্মক ঢেউ নিয়ে আসতে পারে উল্লেখ করে এনএইচসি বলছে, ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ এলাকায় যেখানে মূল অংশটি আছড়ে পড়তে পারে, সেখানে এবং তার কাছাকাছি উপকূলীয় অঞ্চলে ৬ থেকে ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে হারিকেন মৌসুমের শুরুতে এটি দ্বিতীয় শক্তিশালী ঝড় হতে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে হারিকেন মৌসুম সাধারণত ১ জুনে শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। এর আগে প্রথম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় আলবার্টোর আঘাতে চারজনের মৃত্যু হয়। সূত্র: ওয়েদার ডট কম, সিএনএন, গার্ডিয়ান।
