প্রায়ই খালি পেটে থাকলে মাথাব্যথা অনুভব করেন অনেকেই। একে সাধারণ বিষয় মনে করে এড়িয়ে গেলেও, চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে এটি শরীরের একটি জরুরি সতর্কবার্তা যার অর্থ, ‘আমার পুষ্টি দরকার।’ এই বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা, যা ‘হাঙ্গার হেডেক’ বা ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা নামে পরিচিত, খাদ্যের অভাবে আমাদের দেহের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া কিছু সহজ প্রক্রিয়ার ফল।
কেন হয় এই ‘ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা’
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন আমরা দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকি, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা (ব্লাড সুগার) উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। আমাদের মস্তিষ্ক পরিচালনার মূল জ্বালানি হলো গ্লুকোজ। মস্তিষ্কে এই শক্তির ঘাটতি দেখা দিলে সেটি মাথা ও শরীরের অন্যান্য অংশে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলস্বরূপ মাথাব্যথা শুরু হয়।
তাছাড়া, ক্ষুধার সময় শরীর কিছু হরমোন (যেমন কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন) এবং হিস্টামিন নিঃসরণ করে, যা রক্তনালীতে প্রভাব ফেলে মাথাব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ
ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথার পেছনে আরও বেশ কিছু বিষয় জড়িত থাকতে পারে-
- ডিহাইড্রেশন: শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাব।
- অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ: নির্দিষ্ট সময়ে খাবার না খাওয়া।
- ক্যাফেইন উইথড্রয়াল: হঠাৎ করে ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া।
- ঘুমের অভাব: অপর্যাপ্ত ঘুম।
- কড়া ডায়েট: হঠাৎ করে ক্যালোরি গ্রহণ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেওয়া।
ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথার লক্ষণ
এই ধরনের মাথাব্যথা সাধারণত কপাল বা মাথার সামনের অংশ থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলিও দেখা দিতে পারে-
- মাথা ঘোরা বা তীব্র দুর্বলতা
- বমি বমি ভাব
- ঘাড় ও কাঁধে টান বা শক্ত ভাব
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা
তাৎক্ষণিক প্রতিকার ও প্রতিরোধ
এই মাথাব্যথা কমানোর সবচেয়ে কার্যকর এবং সহজ উপায় হলো তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া। পুষ্টিকর ও সুষম খাবার, যাতে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, সবজি ও ফল রয়েছে, তা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। হাতে সময় না থাকলে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস, যেমন- বাদাম, ফল, দই বা হোল গ্রেইন বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত, খাবার গ্রহণের ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে মাথাব্যথা কমতে শুরু করে। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।
প্রতিরোধে করণীয়
ছোট পরিমাণে ঘন ঘন খাবার: দিনে কয়েকবার ছোট ছোট অংশে খাবার গ্রহণ করুন।
পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ: সারাদিন ধরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
নিয়মিত ঘুম: পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম নিশ্চিত করুন।
ধীরে পরিবর্তন: হঠাৎ করে তীব্র ডায়েট বা ক্যালোরি কমিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
রোজার সময় সতর্কতা: রোজা রাখলে সেহরির সময় পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই 'হাঙ্গার হেডেক' সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যদি মাথাব্যথা বারবার হয়, খাবার বা সাধারণ ওষুধেও কমে না আসে অথবা দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিশেষত, যদি হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, তীব্র মাথা ঘোরা বা চোখে ঝাপসা দেখা যায় তবে তা স্ট্রোকের মতো গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এক মুহূর্ত দেরি না করে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা আবশ্যক।
ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। সময়মতো ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে আপনি সহজেই এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারেন। তাই শরীরের বার্তাগুলোকে গুরুত্ব দিন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।
ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৫০
নিজেই বানান ‘ফার্স্ট এইড বক্স’
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়ালো ৬০ হাজার
অতিরিক্ত ওরস্যালাইন খাওয়ায় হতে পারে মারাত্মক বিপদ